একটি জয় বদলে দিয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। সেই জয় পাল্টে দিয়েছিল সংগীতের সুর। বিবর্ণ ক্যানভাসে শুরু হয়েছিল রংধনুর আঁকিঝুকি।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ জেতে আইসিসি ট্রফি। আকরাম, পাইলট, শান্ত, বুলবুলরা কেনিয়াকে হারিয়ে মালয়েশিয়ার কিলাত কেলাব মাঠে উড়ায় লাল-সবুজের পতাকা। সেই ট্রফি জয় দিয়ে শুরু, এরপর বাংলাদেশ বিশ্বকাপে নাম লিখায়, অর্জন করে টেস্ট স্ট্যাটাসসহ কতো কিছু।
২৭ বছর আগে আজকের দিনেই বাংলাদেশ জয় পায় আইসিসি ট্রফির ফাইনালে। দিনটি আবার আসায় বেশ স্মৃতিকাতর হয়ে গেলেন খালেদ মাসুদ পাইলট। এদিন পাশে পেলেন সতীর্থ হাসিবুল হোসেন শান্তকেও। ঈদের ছুটিতে রাজশাহীতে দুজন। পাইলটের নোঙর ক্যাফের সামনে দাঁড়িয়ে দুজন ছবি তুললেন।
পাইলট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘২৭ বছর। অনেকে বলে থাকেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছিল সেখানে। আজ থেকে ২৭ বছর পূর্বে, ১৯৯৭ সালের ১৩ এপ্রিল আইসিসি ট্রফির ফাইনালে কেনিয়াকে হারায় বাংলাদেশ। সেদিন শেষ ওভারে অপরাজিত থেকে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছিলাম আমি খালেদ মাসুদ পাইলট ও হাসিবুল হোসেন শান্ত।‘
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের কিলাত কেলাব ক্লাব মাঠে ১২ এপ্রিল শুরু হয় বাংলাদেশের স্বপ্নের ফাইনাল। তবে ম্যাচটির ফলাফল আসে আজকের এই দিন, ১৩ এপ্রিলে। আজ পূর্ণ হলো বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা জয়ের ২৭ বছর।
বৃষ্টির কারণে প্রথম ইনিংসে কেনিয়া ব্যাটিং করার পর ১২ তারিখে খেলা আর মাঠে গড়ায়নি। ১৩ তারিখ ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথডে নতুন লক্ষ্যে খেলতে নামে বাংলাদেশ। ফাইনালে টসে জিতে কেনিয়াকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আকরাম খান। অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে যথাযথ প্রমাণ করে ৫৮ রানের মধ্যে কেনিয়ার ৩ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক মরিস ওদুম্বেকে নিয়ে শতরানের জুটি গড়েন স্টিভ টিকোলো। ওদুম্বে ৪৩ রান করে ফিরলে আর বড় জুটি গড়তে পারেনি কেনিয়া। তবে টিকোলোর ১৪৭ রানের বিশাল ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৪১/৭ সংগ্রহ দাঁড় করায় দলটি। বাংলাদেশের পক্ষে মোহাম্মদ রফিক ৪০ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়াও খালেদ মাহমুদ ও সাইফুল ইসলাম পান ২টি করে উইকেট।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের আগে বৃষ্টি হানা দেওয়ায় টাইগারদের নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৫ ওভারে ১৬৬ রান। জয়ের লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ বদলে দেন কোচ গ্রিনিজ। প্রায় বর্তমান যুগের টি-টোয়েন্টি সুলভ ব্যাটিং করতে হবে বলে নিয়মিত ওপেনার আতহার আলী খানকে না নামিয়ে তুরুপের তাস রফিককে ওপেনিং করান কোচ। তার সঙ্গে নামেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়। যদিও প্রথম বলে ফেরেন দুর্জয়।
তবে তাতে ভড়কে না গিয়ে উলটো কেনিয়ান বোলারদের উপর চড়াও হন রফিক ও মিহাজুল আবেদীন নান্নু। রফিক ১৫ বলে ২টি করে চার ও ছয়ে করেন ২৬ রান। চারে নামা আমিনুল ইসলামও ১০০ স্ট্রাইক রেটে রান তুলতে থাকেন। নান্নুর ২৬, আমিনুলের ৩৭ ও অধিনায়ক আকরাম ২২ রান করলেও ১২৩ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
জয়-পরাজয়ের দোলাচলে থাকা দুই দলের মধ্যে টাইগারদের পক্ষে তখন নায়ক হয়ে দাঁড়ায় খালেদ মাসুদ পাইলট ও সাইফুল ইসলাম। এই দুইজনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের জয় হাতের মুঠোয় চলে আসে। সাইফুল ১৪ রানে আউট হলেও ৭ বলে ১৫ রান করে ইনিংসের শেষ বলে জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন পাইলট।
বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করে হাসিবুল হোসেন শান্ত ও খালেদ মাসুদের দৌঁড় এখনো বাংলাদেশের ক্রিকেটানুরাগীদের মনে বড় জায়গা নিয়ে আছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের পাথেয় হিসেবে কাজ করা এই জয় দিয়েই তো টাইগারদের গর্জনের শুরু।