অনেকের হয়তো মনে নেই, ৩১ বছর আগে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা ১৪০০ সাল উদযাপন কমিটি করেছিলেন। এক হাজার সদস্যবিশিষ্ট নাগরিক কমিটি করা হয়েছিল। আহ্বায়ক ছিলেন বেগম সুফিয়া কামাল এবং সদস্য সচিব বর্তমান সড়ক ও সেতু মন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিন্তু এ কথা আজকের অনেকের অবিশ্বাস্য মনে হয় সেদিন (১৯৯৩ সালের ১৪ এপ্রিল) বেগম খালেদা জিয়া সরকার রমনা বটমূলে সেই অনুষ্ঠান করতে দেয়নি। ওই সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মতিন চৌধুরী বলেছিলেন, ‘এই দেশে বিজাতীয় সংস্কৃতি পালন করতে দেওয়া হবে না।’
আবার এই বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ১৯৯৩ সালের ১১ বছর পর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। হত্যাকারীরা পুরো আওয়ামী লীগ পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। অনেকেই আমার সাথে একমত হবেন- হত্যাকারীরা ২০০৪ সালের ১৪ এপ্রিল নিশ্চিত হয়ে যায় আওয়ামী লীগকে কোনোভাবেই ঠেকানো সম্ভব নয়। মূলত তখন থেকেই পরিকল্পনা করে ফেলে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে হবে এবং আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে।
যারা বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ পাঠ করেছেন তারা জেনে থাকবেন বঙ্গবন্ধু কারাগারের ভিতরে থেকেও নববর্ষ পালন করেছেন। পাকিস্তান সরকার ১৯৬৫ সালে পাক ভারত যুদ্ধের সময় রবীন্দ্রনাথের গান প্রচার মাধ্যমে নিষিদ্ধ করে দেয়। ১৯৬৭ সাল থেকে রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হয় । বঙ্গবন্ধুর ডায়েরি থেকে আমরা এই বিষয়গুলো জানতে পারি।
‘‘আমি কারাগার থেকে আমার দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই। ১০ সেল থেকে মিজানুর রহমান চৌধুরী আমাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাইয়া একটা টুকরা কাগজে নিম্নলিখিত কবিতাটা লিখে পাঠায়: আজিকের নূতন প্রভাতে নূতন বরষের আগমনে -মুজিব ভাইকে 'বন্ধু হও, শত্রু হও, যেখানে যে কেউ রও, ক্ষমা কর আজিকার মত, পুরাতন বরষের সাথে, পুরাতন অপরাধ হতে।' নববর্ষের শ্রদ্ধাসহ মিজান ১লা বৈশাখ ১৩৭৪ সাল।’’ (কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা ২২৩)
১৯৬৬ সালের এই দিনে (১ লা বৈশাখ ১৩৭৪) রাজবন্দি মিজানুর রহমান চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি কবিতাও লিখে পাঠিয়েছিলেন। বাঙালি সংস্কৃতির প্রধান উৎসব ‘বর্ষবরণ’ বঙ্গবন্ধুর জীবনে সেদিন এভাবেই সম্পন্ন হয়েছিল। বোঝা যাচ্ছে কারাগারের বন্দিজীবন বাঙালির প্রধান পুরুষ বঙ্গবন্ধুকে বর্ষবরণে বাধা দিতে পারেনি, বাধা দিতে পারেনি কোনো রাজবন্দিকেই। ফুল, গান, কবিতা- সবই উপস্থিত ছিলো সেদিন কারাগারে। আর সবচেয়ে বেশি করে যা উপস্থিত ছিলো তা হলো বাঙালিত্ব বা বাঙালি জাতীয়তাবাদ। এই বাঙালিত্বই আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি বাঙালি জাতির জন্য বরাবরই আনন্দের দিন। ২০ বছর আগের এ দিনটি সমগ্র বিশ্বের সব বাঙালির জন্য ছিল একটি গৌরবের দিন, আনন্দের দিন, স্মরণীয় দিন। ২০০২ সালে বিবিসি প্রথমে বৃটেনের বিখ্যাত মানুষদের নিয়ে জনমত জরিপ করে। বিবিসি’র জনমতে ওই দিন বাঙালি জাতির মহান নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিবিসি’র বাংলা ভাষাভাষি শ্রোতাদের ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ নির্বাচিত হন। আর এমন এক সময়ে শেখ মুজিব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন, যখন স্বাধীনতাবিরোধী চক্র মুজিবের নাম এ বাংলায় প্রায় মুছে ফেলে দিয়েছিল। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট পরিবারের সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু মুজিবকে হত্যার পর মূলত স্বাধীন বাংলাদেশকেই হত্যা করা হয়।
স্বাধীনতাবিরোধী কিসিঞ্জার-ভুট্টো চক্রের এ দেশীয় দালাল খুনি মোশতাক- জিয়া এবং স্বৈরাচার এরশাদ বঙ্গবন্ধু মুজিবের নাম মুছে ফেলার জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করে। এমনকি স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসেও স্বাধীনতার জনক ও বিজয়ের মহানায়ক মুজিবের নাম স্মরণ করা হতো না। এ সময় স্বাধীন বাংলাদেশকে ‘মিনি পাকিস্তানে’ পরিণত করা হয়। ষড়যন্ত্রের শিরোমণি ঘাতক মোশতাক ক্ষমতায় ছিল মাত্র ৮৩ দিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সংগ্রামী জীবনের গৌরবগাথা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলেই ঘাতকচক্র ক্ষান্ত হয়নি, ওরা গণতন্ত্রকে হত্যা করে এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পরিণত করে। ৭৫ পরবর্তী আড়াই দশক ক্ষমতাসীন স্বাধীনতাবিরোধী সরকার ৩০ লাখ শহীদ এবং ৪ লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে মানবাধিকারবিহীন এক বন্দী শিবিরে পরিণত করে।
০২ অপারেশনটি ১৬ অক্টোবর ২০০২ থেকে ৯ জানুয়ারি ২০০৩ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অপারেশনে ৫০ হাজারেরও বেশি নিরাপত্তা বাহিনী অংশগ্রহণ করে। অপারেশন চলাকালে যৌথবাহিনী ১১ হাজার ২৪৫ সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে। শত শত মানুষ আহত হয় এবং ৪০ জনেরও বেশি হেফাজতে মারা যান। ৯ জানুয়ারি ২০০৩ তারিখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একটি ক্ষতিপূরণমূলক আইন পাস করে যা অপারেশনে অংশগ্রহণকারী নিরাপত্তা ব্যক্তিদের আইনি সুরক্ষা প্রদান করে। ২০১৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ হাইকোর্ট এ্যাডমিনিটি অ্যাটর্নি অবৈধ ঘোষণা করে এটি বাতিল করে দেয়।
পাঠক আসুন আমরা একটু পিছন ফিরে তাকাই, কেমন ছিল ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের বাংলাদেশের গ্রামবাংলার চিত্র। এখন যাদের বয়স ২০ বছর কিংবা ২৫ বছর তারা সে সময় হত্যা নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্রের কথা মনে করতে পারবেন না। সেই সময় ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখে দেশে ও প্রবাসের জনগণ ভোট দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত করেছে। অর্থাৎ বাংলা ও বাঙালি জাতির এমন কঠিন ও দুঃসহ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন। এটা ছিল সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য এক বিশাল আনন্দঘন পুরস্কার।
১৬ ডিসেম্বর যেমন বাঙালির জন্য বিজয়ের দিন, তেমনি ২০০৪ সালের পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) দিনটি বিশ্বের সব বাঙালির জন্য আরেক আনন্দঘন বিজয়ের দিন। দিনটি ছিল শুক্রবার। বিবিসি বাংলা বিভাগের বিশ্বব্যাপী শ্রোতাদের ভোটে বঙ্গবন্ধু ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ নির্বাচিত হন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০ জন বাঙালির তালিকায় প্রথম নামটি ছিল শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিতে ২০ জন বাঙালির মধ্যে এক নম্বর ব্যক্তি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নাম প্রচারিত হয়। ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত শীর্ষ ২০ বাঙালির ওপর বিবিসি অনুষ্ঠান প্রচার করে। ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত বিশ্বের হাজার হাজার শ্রোতা চিঠি, ই-মেইল এবং ফ্যাক্সের মাধ্যমে তাদের মনোনয়ন পাঠায়। শ্রোতাদের মতামতের ভিত্তিতে বিবিসি তৈরি করে শীর্ষ ২০ জন বাঙালির তালিকা।
আগেই বলা হয়, ১ বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) বিবিসি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির নাম ঘোষণা করবে। ১৩ এপ্রিল সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির শীর্ষ ২০ জনের মধ্যে দুই নম্বরে কবিগুরুর নাম প্রচারিত হওয়ার পর সবাই বুঝে যায়, এক নম্বরে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৪ এপ্রিল (১ বৈশাখ ১৪১১) শুক্রবার প্রভাতী অনুষ্ঠানে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির নাম প্রচারের সময় বিবিসি মুন্সিয়ানার পরিচয় দেয়। ভাষ্যকার বলেন, এবার শ্রোতাদের মনোনীত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির নাম। রেকর্ডে ধারণকৃত বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বর বাজানো হয়: ‘এর পরে যদি বেতন দেয়া না হয়, আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, তোমাদের ওপর আমার অনুরোধ রইল: প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো।’
এরপর বলা হয় শেখ মুজিবুর রহমান যার বজ্রকণ্ঠ ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগোষ্ঠীকে মুক্তি ও স্বাধীনতার পথ নির্দেশিত করেছিল। এরপর আবার বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বর বাজানো হয়: ‘মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব- এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’
শেখ মুজিবকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে কেন মনোনীত করেছেন- জবাবে জাপানের নাগাসাকি শহর থেকে একজন শ্রোতা মনিকা রশিদ বিবিসির অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আজ আমরা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যে যেখানেই বসে যা কিছু করছি, যা বলছি এর কোনোটাই সম্ভব হতো না যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সময়টাতে না পেতাম। তিনিই বাঙালি জাতিকে প্রথম বোঝাতে সক্ষম হন যে, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি- সর্বোপরি বাঙালি জাতি হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চাইলে রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন হতে হবে। মৃত্যুভয় বা ক্ষমতার লোভ কোন কিছুই তার দীর্ঘ সংগ্রামী মনোভাবকে দমিয়ে দিতে পারেনি।’
বিবিসি বাংলা বিভাগের প্রধান সাব্বির মুস্তাফার তত্ত্বাবধানে পুরো জরিপটি পরিচালিত হয়। ফলাফল প্রচারের পরপর বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা জরিপে অংশগ্রহণকারী সব শ্রোতা এবং বিশ্বের সব বাঙালির প্রতি অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকৃতি দেয়ার সমগ্র গৌরব বাঙালি জাতির। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে তার নিজস্ব ভাষা ছিল, কৃষ্টি ছিল, সংস্কৃতি ছিল, ঐতিহ্য ছিল। ছিল না শুধু একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাঙালিকে দিয়েছিলেন জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। এখানেই বঙ্গবন্ধুর স্বার্থকতা। বঙ্গবন্ধু ধারণ করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্বপ্নকে। বাস্তবায়িত করেছেন তিতুমীর, সূর্যসেন, নেতাজী সুভাষ বসু, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীসহ মুক্তিকামী বাঙালির আকাঙ্ক্ষাকে। তাঁর নেতৃত্বেই পরাধীনতার শিকল ভাঙে বাঙালি জাতি।’
শেখ হাসিনা ১৫ আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিহত সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘আজ যখন জাতির প্রকৃত ইতিহাস এবং বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয়কে ক্ষমতার দাপটে অস্বীকার করার চেষ্টা হচ্ছে, তখন বিবিসির শ্রোতাদের এবার ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহস জোগাবে। আবারও প্রমাণিত হলো- হত্যা করে বা ইতিহাস বিকৃত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম মুছে ফেলা যাবে না। বাঙালি জাতি যতদিন থাকবে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র যতদিন থাকবে, ততদিন বেঁচে থাকবেন এ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রিত্ব বা সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব নয়, আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির কন্যা। এ পরিচয় আমাকে অনুপ্রাণিত করে। ইনশাল্লাহ যতদিন বেঁচে থাকব বাংলাদেশ ও বাঙালির জন্য কাজ করে যাব।’
সেদিন ১ বৈশাখ আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রা শেষে শেখ হাসিনা তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী ও একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা গত ২৯ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা এবং তার মর্যাদা খাটো করার ষড়যন্ত্র করেছে। সঠিক ইতিহাস কখনও মুছে ফেলা যায় না। ইতিহাস সবসময় সত্যকেই স্বীকৃতি দেয়। তাই সমগ্র বিশ্বের সব বাঙালির রায়ে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ প্রমাণিত হয়েছে ইতিহাস সত্য কথা কয়। আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে এ দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাবো। দুঃশাসনের কবল থেকে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করবই।’
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠকন্যা শেখ রেহানা লন্ডন থেকে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া তার প্রতিক্রিয়ায় বিবিসি ও তার শ্রোতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আজ এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে, ইতিহাস বঙ্গবন্ধুকে সঠিক স্থান দিয়েছে। এ ঘটনায় তার সীমাহীন আনন্দ প্রকাশ করে শেখ রেহানা বলেন, ‘বাঙালির হৃদয় থেকে কেউ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে ফেলতে পারবে না। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন বঙ্গবন্ধু।’
আজকে তো আওয়ামী লীগের ও বঙ্গবন্ধুর কথা বলার জন্য পত্রপত্রিকা-টিভি চ্যানেলের অভাব নেই। খালেদা-নিজামী চক্রের সেই দুঃশাসনের দিনে ২০০৪ সালের ১৮ এপ্রিল দুর্দিনের বন্ধু ‘দৈনিক সংবাদ’-এ বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার এই বক্তব্য বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছিল। বাংলাদেশের রাজনীতির চার কলঙ্কিত নাম- মোশতাক, জিয়া, এরশাদ ও খালেদা। এই চারজনই বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার জন্য ষড়যন্ত্র করেছেন। অথচ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সৃষ্টি না হলে এই চার কুচক্রী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল, এমপি ইত্যাদি কিছুই হতেন না। বিবিসির জরিপে বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হওয়ার ঐতিহাসিক ঘটনাটি স্বাধীনতাবিরোধীদের জন্য ছিল একটি শক্তিশালী চপেটাঘাত। বাংলা নববর্ষের দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হওয়া জাতির জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক