প্রায় ১০ দিন ধরে পাবনার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ। গরমে স্বস্তি নেই জনজীবনে। বিরূপ প্রভাব পড়েছে কৃষি ও পোল্ট্রি খামারে। টানা পাঁচ দিন ধরে তাপমাত্রা রয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর। এমন পরিস্থিতিতে মারা যাচ্ছে পোলট্রি খামারের মুরগি। কমতে শুরু করেছে ডিমের উৎপাদন।
পোলট্রি খামারিদের ভাষ্য, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে মুরগি মারা যাচ্ছে। কারণ প্রতিটি খামারের চাল টিনের। আর রোদের তাপ টিনে বেশি লাগছে। যে কারণে মুরগির গরমও লাগছে বেশি। এই গরমে দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার মুরগির শরীরে পানি ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। স্ট্রোক করেই মারা যাচ্ছে মুরগি।
সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের জোতগাছা গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অনেকগুলো ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে। খামারে মুরগি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কর্মচারীরা। কেউ মুরগির শরীরে পানি স্প্রে করছেন, কেউবা ডিম সংগ্রহ করছেন। অন্যদিকে খামারের ভেতর ঠান্ডা রাখতে চলছে বৈদ্যুতিক পাখা। কিন্তু, তাতেও যেন কাজ হচ্ছে না। মুরগিগুলো হাঁসফাঁস করছে গরমে।
মুরগির শরীরে স্প্রের সাহায্যে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছেন এক খামারি
একটি পোলট্রি খামারের শ্রমিক আনিসুর রহমান বলেন, গরম শুরুর পর থেকেই খামারে মুরগির ছটফটানি শুরু হয়েছে। ফ্যানের বাতাসেও ঘর ঠান্ডা হচ্ছে না। প্রতিদিন কয়েকবার করে মুরগির শরীরে পানি ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপরও মুরগি মারা যাচ্ছে। তাদের খামারে ২ হাজার মুরগি রয়েছে। গত এক সপ্তাহে অন্তত ৪০টি মুরগি মারা গেছে। সবশেষ গত শনিবার ৮টি মুরগি মারা গেছে।
চাটমোহর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের লেয়ার মুরগি খামারের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গরম শুরুর পর থেকে মুরগিকে ওষুধ ও স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী খাবারও কম দেওয়া হচ্ছে। এতে ডিমের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। গরমে স্ট্রোক করে মুরগী মারা যাচ্ছে।
আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা গ্রামের খামারি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এমন তাপ থাকলি মইরে শেষ হয়ে যাবো। খুব দুশ্চিন্তায় আছি। যেরমভাবে মুরহি মরতিছে, এমন গরম আরো থাকলি মুরগি টিকানো কঠিন হয়ে যাবিনি। আমারে পথে বসা লাগবিনি।’
খামার থেকে সংগ্রহ করা মুরগির ডিম বাজারে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বিক্রির জন্য
পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গৌরাংগ কুমার তালুকদার বলেন, প্রচণ্ড গরম থেকে খামার রক্ষায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণসহ খামারিদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। খামার ঘরের টিনের চালে চটের বস্তা বিছিয়ে পানি ঢালা, মুরগির শরীরে পানি ছিটানো এবং মুরগিকে স্যালাইনসহ ভিটামিন সি–জাতীয় খাবার বেশি খেতে দিতে বলা হচ্ছে। দুপুরে অতিরিক্ত গরমের সময় খাবার না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় তালিকাভুক্ত লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে ৯৭৮টি। এই তালিকার বাইরে প্রায় ৫০০ খামার আছে। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির তালিকাভুক্ত খামার রয়েছে ১ হাজার ১৩০টি। এসব খামারে মুরগি রয়েছে প্রায় ৫৫ লাখ। প্রচণ্ড গরমে জেলা এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ মুরগি মারা গেছে তার তথ্য জেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগে নেই।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আজ সোমবার (২২ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ১৭ এপ্রিল থেকে পাবনা জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে রয়েছে।