চলতি এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে ‘সংবাদপত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা’ নিয়ে ইতালির পেরুগা শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতা উৎসব। পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসব শেষ হয় রোববার (২১ এপ্রিল ২০২৪)। এই উৎসবে যেসব প্রশ্ন উঠে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে-নিউজরুমগুলোকে সহায়তা বা সম্পূর্ণরূপে রূপান্তরিত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কতটুকু ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এএফপির খবরে বলা হয়, দ্রুত উত্থান ঘটছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই)। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই প্রযুক্তির কারণে সাংবাদিকেরাও এখন নৈতিক ও সম্পাদকীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এটা গেলো নতুন চ্যালেঞ্জের কথা। সম্প্রতি আমাদের দেশের গণমাধ্যমের দিকে যদি লক্ষ্য করি, তাহলে ইদানীং আমরা একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছি প্রতিনিয়ত। তা হলো-সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে পেশাদার সংবাদপত্র বা টেলিভিশনের প্রাসঙ্গিকতা কোথায়? ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম যেভাবে দ্রুত খবর দিচ্ছে-এতে অধিকাংশ খবরাখবর মানুষ সংবাদপত্রে প্রকাশের আগেই জানতে পারছে। তাহলে সংবাদমাধ্যমের গুরুত্ব কী কমে যাচ্ছে?
২. আমরা এমন এক সময় অতিক্রম করছি, সারা পৃথিবীই দুর্দান্ত গতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। গত কয়েক বছরে করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইরান-ইসরায়েল-আমেরিকা দ্বন্দ্ব মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশসহ বিশ্ব। সঙ্গে অর্থনৈতিক মন্দা বিশ্বকে থমকে দেয়। এই পরিবর্তনশীল সময়ে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হচ্ছে সংবাদমাধ্যমকে। ছাপা পত্রিকা, অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতার ধারণা ও ধরনও দ্রুত বদলে যায়। বলা যায়, সাংবাদিকতার পুরনো ধ্যান-ধারণাকে ভেঙে দিয়েছে প্রযুক্তি। সংবাদের সোর্স, পরিবেশনা, সংবাদের ধরন-সবকিছুই পাল্টে গেছে এখন।
করোনকালে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম মিররে প্রকাশিত এক কলামে বলা হয়েছে, জার্নালিজম বা সাংবাদিকতা না থাকলে করোনায় আরও বহু মানুষ প্রাণ হারাত। আসলেই তাই, করোনায় সবকিছু অবরুদ্ধ ছিলো। লকডাউন, ঘরবন্দী জীবন-বিপর্যস্ত করেছিল পৃথিবীকে। এই সময় গণমাধ্যম এবং সামাজিকমাধ্যমই একমাত্র ভরসা ছিল কোভিডকালীন পরিস্থিতি জানার। বিশেষ করে প্রতিদিন করোনাবিষয়ক বুলেটিন মানুষের সঙ্গী ছিল। করোনার সব আপডেট এই বুলেটিনের মাধ্যমে জানত সবাই। বলা যায়, করোনার তথ্য পেতে সামাজিকমাধ্যম মূলধারার সংবাদমাধ্যমকে প্রতিযোগিতায় ফেলে দেয়।
৩. সাংবাদিকতা নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জ মেধা, পুঁজিসহ নানা চাপের। এর বাইরেও আরও অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। ইন্টারনেটভিত্তিক পরিবর্তিত সমাজে গণমাধ্যম নতুন চ্যালেঞ্জে পড়েছে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। ইউনেসকো প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেন্ডস ইন ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন অ্যান্ড মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক ২০১৮ সালে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, ‘এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো ছাড়া বিশ্বের সব দেশে মুদ্রিত পত্রপত্রিকার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।’ ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, মোবাইল জার্নালিজম- যেভাবে দ্রুত খবর দিচ্ছে এতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুদ্রিত পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন তাদের কন্টেটে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হচ্ছে। আরেকটি বিষয় এখানে বলা প্রয়োজন-তা হলো বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা। দ্রুত খবর প্রচারে ফেক নিউজ যেমন ছড়ায়, তেমনি গুজবও তৈরি হয়। ২০১৭ সালে ইউরোপ ও আমেরিকায় রয়টার্স ফাউন্ডেশনের একটি জরিপের বিষয় ছিল ‘গণমাধ্যমকে মানুষ কতটা বিশ্বাস করে’। সেখানে ৬৩ শতাংশ মানুষ গণমাধ্যমকে বিশ্বাস করে না বলে জানায়। সুতরাং বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটটা গভীর। ঘটনার তাৎক্ষণিক নির্ভরশীল তথ্য প্রদান ও সঠিক তথ্যের কোনো বিকল্প নেই।
৪. দেশের জনপ্রিয় ও শীর্ষ অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম পা রাখলো এক যুগে। ইতিবাচক সাংবাদিকতার মাধ্যমে বাংলাদেশের গণমাধ্যম অঙ্গনে স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছে রাইজিংবিডি। অনলাইন এই নিউজ পোর্টালটির যাত্রা শুরু ২০১৩ সালের ২৬ এপ্রিল। ‘পজিটিভ বাংলাদেশ’ বিষয়টিকে ধারণ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পাঠকদের কাছে বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরার প্রতিপাদ্য নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে সংবাদমাধ্যমটি। সহজ ভাষার গণমাধ্যমের বৈশিষ্ট্য এমন হতে হবে যেখানে পাঠকদের মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হয়-এই মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে কাজ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাইজিংবিডি পরিবারের একঝাঁক সংবাদকর্মী। অনলাইন গণমাধ্যমের পরিবারে যে কয়টি গণমাধ্যম বাংলাদেশে পাঠকদের কাছে শক্তিশালী জায়গা করে নিয়েছে তার মধ্যে রাইজিংবিডি ডটকম অন্যতম। ‘প্রতি মুহূর্তের খবর’ এই স্লোগান ধারণ করে নিউজ পোর্টালটি শুধু সংবাদ পরিবেশন করেই দায়িত্ব শেষ করে না, পজিটিভ জার্নালিজমের মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নে নানা ধরনের ভূমিকা রেখে চলেছে। রাইজিংবিডি বর্তমানে অগ্রসর পাঠকের পোর্টাল এবং নির্ভরযোগ্য সংবাদের উৎস- এটা পাঠকদেরই ভাষ্য।
৫. রাইজিংবিডিতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রকাশিত হচ্ছে নানা প্রতিবেদন, ফিচার, বিশ্লেষণ। ক্যাটাগরিগুলো দেখলেই তা বোঝা যায়। জাতীয়, পজিটিভ বাংলাদেশ, নারী ও শিশু, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, ব্যাংক-বীমা, শেয়ারবাজার, করপোরেট কর্নার, কৃষি, রাজনীতি, স্পেশাল, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, শিক্ষা, সাহিত্য, বিনোদন, খেলাধুলা, আন্তর্জাতিক, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ, মতামত, সাক্ষাৎকার, মিডিয়া, আইন ও অপরাধ, প্রবাস, ছবিঘর, সাতসতেরো, অন্য দুনিয়া ও দেহঘড়ি, মটো কর্নার। এছাড়া মতামত প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া বিশেষ দিবসে রাইজিংবিডির কর্মীরা পয়লা বৈশাখ, বসন্তবরণ উৎসবসহ নানা অনুষ্ঠানও করছেন।
বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গনেও বিশেষ প্রভাব ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে রাইজিংবিডি। প্রকাশ হচ্ছে বিশেষ দিনে বিশেষ সংখ্যা। বৈশাখ সংখ্যা, ঈদসংখ্যা নিয়মিত মুদ্রিত সংখ্যা হিসেবে বের হচ্ছে। এখানে দেশ-বিদেশের জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। সাহিত্যাঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে এই সংখ্যাগুলো।
প্রতিষ্ঠার ১২তম বছরে এসেও রাইজিংবিডি সব খবর সবার আগে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। এজন্য যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সংবাদ পরিবেশনায় প্রতিষ্ঠানটির একঝাঁক তরুণ, মেধাবী এবং প্রতিশ্রুতিশীল সংবাদকর্মী রাতদিন একনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। আমাদের কাজ চব্বিশ ঘণ্টার। মিডিয়ায় মূল কাজ এটিই। সামনে যেকোনো দুর্যোগে অনলাইন গণমাধ্যম তথা রাইজিংবিডি প্রধান ভূমিকা রাখবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা নিরপেক্ষ, নির্মোহ সাংবাদিকতা করতে চাই। আজকের এইদিনে এটিই আমাদের শপথ।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, রাইজিংবিডি