ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) এর সহযোগিতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈশ্বিক সংস্থা ভাইটাল স্ট্রাটেজিস-এর যৌথ উদ্যোগে দিনব্যাপী সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সাংবাদিকতা কর্মশালা নগর ভবনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
রোববার (২৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমের ২৫ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
এ সময় মেয়র বলেন, ডিএনসিসির একার পক্ষে সড়ক নিরাপদ করা সম্ভব নয়। শহরের সড়ক সমূহকে নিরাপদ এবং টেকসই করার জন্য সকল নাগরিকের সহযোগিতা প্রয়োজন। সড়কে সকলে ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলুন। মোটর সাইকেল ও বাইসাইকেলে হেলমেট পরুন। ব্যক্তিগত গাড়িতে সিটবেল্ট ব্যবহার করুন। গাড়ি চালকদের প্রতি অনুরোধ, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাবেন না, পথচারী এবং সাইকেল আরোহীদের অধিকারকে সম্মান করুন এবং শহরে গাড়ির গতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
মেয়র সব নাগরিককে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আসুন আমরা সবাই নিরাপদ, সহজগম্য ও আনন্দদায়ক সড়ক ব্যবস্থা তৈরিতে একসাথে কাজ করি। নিজস্ব পরিসরে অকালমৃত্যু কমিয়ে আনার লক্ষ্যে আওতাধীন সড়কসমূহ নিরাপদ করতে ডিএনসিসি সক্রিয়ভাবে কাজ করবে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রযুক্তিনির্ভর (আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স) সমাধানে যেতে হবে। ডিএনসিসি এআই নির্ভর সমাধানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এজন্য অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা উত্তরের সড়কে পথচারীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। এজন্য ফুটপাথ প্রশস্ত, নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দময় করা, ফুটপাথ হতে নির্মাণ সামগ্রী ও অবৈধ দোকান উচ্ছেদ এবং হকারদের সুষ্ঠূ ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনা হচ্ছে। রাস্তা পারাপারে পর্যাপ্ত জেব্রা ক্রসিং বা পদচারী সেতুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি ডিএনসিসির সেবা গ্রহণকারী নাগরিক ও সেবা প্রদানকারী সরকারি সংস্থাগুলোকে ফুটপাথ ও সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
নাগরিক সেবা প্রদানকারী কোনো সংস্থা কর্তৃক জরুরি প্রয়োজনে ফুটপাথ ও সড়ক কাটার প্রয়োজন হলে অবশ্যই ডিএনসিসিকে অবহিত ও প্রয়োজনীয় অনুমতি গ্রহণ করতে হবে বলেও জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সড়কের সমস্যা সমাধানে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা প্রয়োজন। সব গণমাধ্যমে ট্রাফিক আইন ও রোড ক্রাশ নিয়ে প্রচারণা কর্মসূচি পরিচালনা করা প্রয়োজন। ডিএনসিসির পক্ষ থেকে সিগনালে গাড়ি থামানো ও আইন মেনে চলা, পথচারীদের সড়ক পারাপারে সহায়তা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ইত্যাদি বিষয়ে প্রচারণার উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিশেষ করে, সিগনালগুলোতে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হবে। ডিজিটাল স্ক্রিনগুলোতে প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) কো-অর্ডিনেটর-ঢাকা উত্তর মো. আবদুল ওয়াদুদ, বিশিষ্ট অভিনেতা ও চিত্রশিল্পী আফজাল হোসেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে নিয়োজিত বৈশ্বিক সংস্থা ভাইটাল স্ট্রাটেজিস-এর টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর– রোড সেফটি আমিনুল ইসলাম সুজন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিআইজিআরএস’র কমিউনিকেশন অফিসার খালেদা জেসমিন মিথিলা।
কর্মশালায় সড়ক নিরাপত্তার আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও বৈশ্বিকভাবে গৃহীত নিরাপদ ব্যবস্থাসমূহ বিষয়ে আলোচনা করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার–অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর সহযোগী অধ্যাপক ড. এসএম সোহেল মাহমুদ ও ড. আসিফ রায়হান, ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনিশিয়েটিভ (ডব্লিউআরআই) এর বাংলাদেশ পরামর্শক আর্কিটেক্ট ফারজানা আক্তার তমা এবং সড়ক নিরাপত্তা সাংবাদিকতা বিষয়ে আলোচনা করেন এনটিভির বার্তা প্রধান জহিরুল আলম।