মাথার উপরে গনগনে সূর্য। বৃষ্টিহীন তপ্ত বৈশাখের দুপুর। সঙ্গে ইটভাটার ছাই কয়লা আর আগুনের গরম। এর মধ্যে, কাঁচা ইট উল্টে দেওয়ার কাজ করছেন বৃদ্ধ সাত্তার শেখ (৭৫)।
বুধবার (১ মে) মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের আরব ব্রিকস নামের ইটভাটায় গেলে দেখা মেলে এ দৃশ্যের। একটু এগিয়ে গিয়ে বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলেন এ প্রতিবেদক।
সাত্তার শেখ জানান, তার বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায়। দুবেলা দুমুঠো খাওয়ার জন্য এই বয়সেও তাকে কাজ করতে হচ্ছে। কারণ পরিবারে উপার্জনক্ষম আর কেউ নেই। এক ছেলে দশ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। দুই মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। স্ত্রী মাজেদা বেগমও তার সঙ্গে ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন।
১৪ বছর বয়স থেকে ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন সাত্তার। তবে এখন আর আগের মতো পরিশ্রম করতে পারেন না। চোখে কম দেখেন। হাত-পা চলতে চায় না। কিন্তু পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে তাকে এই কাজ করতে হচ্ছে।
সাত্তার শেখ বলেন, ইটের চারপাশ রোদে শুকানোর জন্য উল্টে দিতে হয়। ইটভাটায় সবচেয়ে সস্তা শ্রমের কাজ ইট উল্টানো। সাধারণত বৃদ্ধ ও শিশুরা এ কাজ করে থাকে। ইটভাটায় কাজ করা শ্রমিকদের সন্তান ও দীর্ঘদিনের পুরনো কর্মীদের এই কাজ দেওয়া হয়।
সত্তোরোর্ধ্ব এই বৃদ্ধ বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৪-৫ হাজার ইট উল্টাতে হয়। ভোর ৬টায় কাজ শুরু করে মাঝে একবার বিরতি নিয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করি। আট ঘণ্টার মতো কাজ করে মজুরি হিসেবে ২০০ টাকা পাই। সব মিলিয়ে মাসে ৫-৬ হাজার টাকা। কারণ কাজ না করলে মজুরি পাওয়া যায় না।
সাত্তার জানান, ইটভাটার সারা বছর কাজ থাকে না। বছরে ৪-৫ মাস কাজ হয়। এরপর বাড়ি ফিরে যান। সেখানে কৃষি জমিতে শ্রম দেন। কিন্তু সে সময় আরও বেশি কষ্টে দিন কাটে। তখন ইটভাটার মালিকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেন। পরের বছর কাজ করে সেটা পরিশোধ করেন।
সাত্তারের স্ত্রী মাজেদা বলেন, আমাদের কষ্টের কথা শুনে কী লাভ? জীবনটাই চলে গেছে কষ্টের মধ্যে। যতদিন নিশ্বাস আছে কাজ করেই খেতে হবে।
আরব ব্রিকসের মালিক মেসবা উদ্দিন বলেন, সত্তার শেখ আমাদের অনেক পুরাতন কর্মী। বহু বছর ধরে তিনি এখানে কাজ করছেন। তবে এখন বয়স হয়ে গেছে। তারপরও মানবিক কারণে তাকে ইট উল্টানোর কাজ দেওয়া হয়েছে।
খুবই অল্প সময় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন সত্তার। সময় নষ্ট হচ্ছে জানিয়ে তড়িঘড়ি ইট উল্টাতে শুরু করেন। তাই বয়স্ক ভাতা বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কোনো সাহায্যে সহযোগিতা করেছে কিনা? এ সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন করা যায়নি।