মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় প্রায়ই কাউকে কিছু না বলে লাপাত্তা হয়ে যেতেন জগুনা বিবি। পরিবারের সদস্যরা তাকে পুনরায় খুঁজে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসলেও শেষবারের ঘটনাটি একটু ভিন্ন।
এর আগে তাকে নিজ জেলার মধ্যে খুঁজে পাওয়া গেলেও, শেষ বার যখন হারান তখন দেশ ছেড়ে ভুলে বর্ডার পেরিয়ে চলে চান ভারতে। পরিবারের সবাই তার খোঁজ না পেয়ে ভেবেছিলেন হয়তো তাকে আর পাওয়া যাবে না। আর এভাবেই কেটে যায় দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময়। তবে অবশেষে ফেসবুকের কল্যাণে এবার বাড়ি ফিরেছেন তিনি। তাকে নতুন করে ফিরে পেয়ে খুশি স্বজনরা ও এলাকাবাসী।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জগুনা বিবির বয়স এখন সত্তর। তার বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জাজিরা ইউনিয়নের ডেঙ্গর বেপারী কান্দি এলাকায়। তার স্বামীর নাম লাল মিয়া বেপারী। ২০১১ সালে তিনি নিখোঁজ হন। এরপর আর তার সন্ধান পায়নি পরিবার।
গত রমজান মাসে জাজিরা উপজেলার মাসুদ রানা নামের এক যুবকের ফেসবুক আইডিতে কমেন্ট করেন আজিজুল শেখ নামের এক ব্যক্তি। তার বাড়ি ভারতের কলকাতায়। তিনি কমেন্টের মাধ্যমে জানান তার কাছে আট বছর ধরে বাংলাদেশের জাজিরার জগুনা নামের একজন বৃদ্ধা রয়েছেন। এরপর মাসুদ রানা জাজিরার কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপে জগুনা বিবির ছবি দিয়ে তার পরিবারের সন্ধান চেয়ে পোস্ট করেন। আর সেখান থেকেই খোঁজ মিলে যায় জগুনা বিবির পরিবারের। এরপর পরিবারের সদস্যরা কলকাতার আজিজুল শেখের সাথে যোগাযোগ করে ৩০ এপ্রিল কলকাতা থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন জগুনা বিবিকে। দীর্ঘদিন পর তাকে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত পরিবারের সদস্যরা।
জগুনা বিবির ছেলে জয়নাল বেপারী বলেন, আমার মা হারিয়ে যাওয়ার পর অনেক জায়গায় খোঁজ করেছি, কিন্তু পাইনি। ভেবেছিলাম মাকে আর খুঁজে পাবো না। পরে মাসুদ ভাইয়ের মাধ্যমে আমার মায়ের খোঁজ পাই। আমরা কলকাতার সেই ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে মায়ের পরিচয়পত্রসহ সকল প্রকার নথিপত্র পাঠাই। উনি আমার মাকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আমি আমার মাকে পেয়ে অনেক খুশি।
জগুনা বিবিকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া যুবক মাসুদ রানা বলেন, আমি নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে পোস্ট দেওয়ার পর সেখানে আজিজুল শেখ নামের একজন কমেন্ট করেন। পরে হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার নিয়ে আমার সাথে মোবাইলে কথা বলেন। তিনি জানান আমাদের জাজিরা এলাকার জগুনা বিবি নামের একজন বৃদ্ধা তার কাছে আছেন। আমি তার সাথে কথা বলে তথ্য নিয়ে প্রাণের জাজিরা নামের ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিলে জগুনা বিবির পরিবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে আমি কলকাতার আজিজুল শেখের সঙ্গে তাদের কথা বলিয়ে দিই।
জগুনা বিবির আশ্রয়দাতা কলকাতার আজিজুল শেখ মুঠোফোনে জানান, অন্তত আট বছর আগে তিনি অসুস্থ অবস্থায় জগুনা বিবিকে খুঁজে পান। এরপর থেকেই তিনি তাদের পরিবারের সঙ্গে থাকা শুরু করেন। চারমাস আগে হঠাৎ করে তিনি তার ছেলেমেয়ে ও আগের বাসস্থানের কথা বলতে থাকেন। পরে ফেসবুকে সার্চ করে জাজিরার মাসুদ রানা নামের এক তরুণের সন্ধান পান। সেখান থেকে জগুনা বিবির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে আবেদন করলে অনুমতি পাওয়ার পর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে তার পরিবারের কাছে পাঠানো হয়।
জগুনা বিবি পাসপোর্টবিহীন ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, যদি কারো পাসপোর্ট হারিয়ে যায় বা কোনো কারণে কেউ পাসপোর্টবিহীন অন্য দেশে প্রবেশ করেন; কিন্তু কোনো অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত না হয়; এমন ব্যক্তিদের দুই দেশের সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে আউটপাস বা ট্রাভেলপাসের মাধ্যমে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনা বা নেওয়া যায়।
এ ব্যাপারে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর জগুনা বিবিকে তার পরিবার ফিরে পেয়েছে। এটি আসলেই আনন্দের সংবাদ। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে। যদি জগুনা বিবি অসুস্থ থাকেন; প্রয়োজনে তার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।