আগামী ৮ মে হবে গোপালগঞ্জের তিনটি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, প্রার্থীদের ততই বেড়েছে দৌড়ঝাঁপ। সেইসঙ্গে আচরণবিধি লঙ্ঘনের করছেন প্রার্থীরা। জনসভায় প্রকাশে হুমকি-ধামকি দেওয়াসহ দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন।
তবে প্রার্থীরা নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, জায়গার সংকুলান না হওয়ায় দেয়ালে পোস্টার লাগাতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে দুঃখ প্রকাশ করে এসব পোস্টার সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন।
এদিকে, কোনো অভিযোগ না আসায় আচারণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি রিটার্নিং কর্মকর্তা।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৮ মে গোপালগঞ্জ জেলার সদর, কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে তিন উপজেলায় ৪৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এরমধ্যে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী ৮ জন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৭ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৩ জন। এ উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৯৩ হাজার ১৫১ জন। টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী ২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৮ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৫ জন। এ উপজেলায় মোট ভোটার ৯০ হাজার ১৩২ জন। কোটালীপাড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ২ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৬ জন। এ উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৬ জন।
এদিকে, তিন উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ তত রেড়েছে। হাট বাজার, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে নিজের পক্ষে ভোট চাইছেন, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে নির্বাচনী আচারণবিধি লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন প্রার্থীরা। বিশেষ করে সদর উপজেলার প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। এমনকি নির্বাচনী সমাবেশে দেয়া হচ্ছে হুমকি। নির্বাচনী জনসভায় প্রকাশ্যে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের চামড়া তুলে নেয়ার হুমকি দেন কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারমান ও প্রার্থী বিমলকৃষ্ণ বিশ্বাস।
নির্বাচনে প্রধান অনুসঙ্গ হলো প্রতীক সম্বলিত পোস্টার। ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ও নিজের প্রতীক জানাতে ব্যবহার করা হয় এসব পোস্টার। তবে এসব পোস্টার দড়ি দিয়ে বেঁধে টাঙানো নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের এ নিয়মের তোয়াক্কা না করে দেয়ালে দোয়ালে, গাছসহ বিভিন্ন স্থানে লাগিয়েছে পোস্টার। প্রার্থীদের সমর্থকেরা দিনের বেলায় পোস্টার না লাগলেও রাতের আঁধারে এ সব পোস্টার দেয়ালে ও গাছে লাগিয়ে দিচ্ছেন।
এদিকে, গত (২ মে) বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নির্বাচনী আইনশৃংখলা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় পো্টার তুলে ফেলার জন্য সকল প্রার্থীদের নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম।
সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুশীল বিশ্বাস শিপন বলেন, ‘দেয়ালে পোস্টার লাগানো বা আচারণবিধি লঙ্ঘন করা ঠিক নয়। আচরণবিধি আমাদের যথাযথ মানা উচিত। আমি আইনের বাইরে নই। যদি কোনো ভূল হয়ে থাকে এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’
সদর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান ভুঁইয়া লুটুল বলেন, ‘কোনো প্রার্থীর দোষ দেয়া ঠিক হবে না। সবাই কিন্তু সচেতন। আমরা সবাই জানি দেয়ালে, গাছে পোস্টার লাগালো যাবে না। আমার আমাদের প্রত্যেক কর্মীকে বলে থাকি। কিন্তু কিছু কর্মী বুঝতে না পারায় এটা করে থাকে। আমরা জানতে পারলে কর্মীদের ওই পোস্টার তুলে ফেলতে বলি।’
সদর উপজেলার অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিবুল ইসলাম মিটু বলেন, ‘দেয়ালে প্রার্থীরা পোস্টার লাগাতেই পারে। কারণ কাগজ সুতা দিয়ে বেঁধে দিলে তা ছিড়ে যায়। আর জায়গায় সংকুল নেই। আচারণবিধি শিথিল হওয়ায় হয়ত সকলেই দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছে।’
তবে হুমকি দেয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়া প্রসঙ্গে কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রার্থী বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ‘হুমবি দেয়ার ভিডিওটি কাটিং করে প্রচার করা হয়েছে। আমার পুরো ভিডিওটি ছাড়া হয়নি। ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়ে আমার পুরো বক্তব্য দেয়নি।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফয়জুল মোল্যা বলেন, কয়েকটি মৌখিক অভিযোগ এসেছিল। সেগুলোর সমাধান করা হয়েছে। তবে প্রার্থীরা দেয়ালে যে পোস্টার লাগিয়েছে তা অপসারণ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১ দিনের মধ্যে প্রার্থীরা তা অপসারণ করে নেবেন। নির্বাচন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।