গোপালগঞ্জ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মভূমি। জন্মভূমিতে তারই নামে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। তবে তখন ছিল না কোনো ম্যুরাল, কিংবা প্রতিকৃতি। পরে ২০১৪ সালে ম্যুরাল নির্মাণের জন্য প্রজেক্ট অনুমোদন হয়। প্রজেক্ট পাশ হওয়ার এক দশক পার হতে চলেছে। অথচ আজও কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দপ্তর। আদৌ কবে নাগাদ শেষ হবে, তা নিয়ে দেখা দিয়ে সংশয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে অনুমোদনপ্রাপ্ত বশেমুরবিপ্রবি অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে ১৩টি টেন্ডারের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের জন্য বরাদ্দ ছিল ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ সময় প্রকল্পগুলো শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত হয়েছিল। ২৪০ বর্গমিটার জায়গায় ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে ম্যুরালটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৭ সাল পর্যন্ত ম্যুরালটির কাজ শুরুই করেনি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। সে সময় কয়েক দফায় বশেমুরবিপ্রবি অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালে প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা উন্নয়ন এবং ওয়ার্কস দপ্তরের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা উন্নয়ন এবং ওয়ার্কস দপ্তর প্রকল্পটি প্রথম রিভাইজড করে। রিভাইজড বাজেটে ২৪০ বর্গমিটার স্থানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এর প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছিল ১৫ কোটি ৮৫ লাখ ৯১ হাজার টাকা।
পরিকল্পনা দপ্তর জানায়, বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল নির্মাণ বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিএফসি অ্যান্ড টিবিএল (জেভি) ১৪ কোটি ২৭ লাখ ৩২ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ম্যুরাল নির্মাণের কার্যাদেশ গত ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করার কথা ছিল বলে জানা যায়। কিন্তু ম্যুরাল নির্মাণের কাজ সমাপ্তির তারিখ প্রায় দেড়বছর আগে শেষ হয়েছে। তবে আজও শেষ হয়নি কাজ।
প্রকল্পটির শতভাগ কাজ সমাপ্ত করতে ব্যর্থ হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন এবং ওয়ার্কস দপ্তর ও প্রকৌশল দপ্তর। ফলে সরকার থেকে টাকা পাওয়া যায়নি। তাই যথাসময়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেনি তারা।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে এক সাক্ষাৎকারে পরিকল্পনা দপ্তর জানায়, আমরা আশা করি ২০২৪ সালের ১৭ মার্চের মধ্যে ম্যুরাল নির্মাণের কাজ শেষ হবে। কিন্তু এখন চলছে মে মাস। তারপরও কাজ শতভাগ শেষ করতে পারছে না পরিকল্পনা দপ্তর।
ম্যুরাল নির্মাণ কাজ কবে নাগাদ শেষ হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তর জানায়, আমরা মেইন স্ট্যাকচারের কাজ শেষ করে ফেলেছি। এখন শুধু অর্নামেন্টাল কাজগুলো বাকি আছে। অর্নামেন্টাল কাজগুলো করতে ৩-৪ মাস সময় লাগতে পারে। যদি ঠিকাদার ঠিকভাবে কাজ করে থাকে, তাহলে আশা করছি আগস্ট মাসের মধ্যে আমরা ম্যুরালটি উদ্ভোধন করতে পারব।
প্রসঙ্গত, বশেমুরবিপ্রবির সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের কোনো ধরনের নির্মাণ কাজ শুরু না করেই দীর্ঘদিন যাবত নির্মাণাধীন দেখানো হয়েছিল। এমনকি কাগজে-কলমে নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দেখানো হয়েছিল ১৬.১৯ শতাংশ এবং ব্যয় দেখানো হয়েছিল আড়াই কোটি টাকা।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন, এটি মোটেও কাম্য ছিল না। জাতির পিতার নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ে তারই কোনো ম্যুরাল নেই। এতো আগের প্রজেক্ট কিভাবে এমন ধীরগতি হয়, তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে আমি অনেকবার কথা বলেছি। আশা করছি কাজটি খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।