ওশেনিয়ার ছোট্ট দ্বীপদেশ ভানুয়াতু। স্রেফ ৩ লাখ মানুষের বসবাস। দ্বীপদেশটি খেলাধুলায় খুব সমৃদ্ধ নয়। কিন্তু গত সপ্তাহে ক্রিকেটে ভানুয়াতুর নারীরা যে বিস্ময় ছড়িয়েছে তা কল্পনাকেও হার মানায়। নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে তারা। যেখানে ভানুয়াতুর র্যাংকিং ৩০ নম্বরে। জিম্বাবুয়ের ১২।
ক্রিকেটে তাদের পদচারণা খুব কষ্টের। ধার করা ব্যাট-প্যাড আর কিট এবং কিছু উপহার পাওয়া সরঞ্জাম দিয়ে শুরু তাদের পথচলা। কিন্তু বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের আগে তাদের অংশগ্রহণ ঝুঁকিতে পড়ে যায় অর্থ সংকটে। এজন্য গণমানুষের থেকে অর্থ সংগ্রহে নামে দেশটির ক্রিকেট সংস্থা। তাতে সফলও হয় তারা। সাড়ে সাত লাখ ভাতা পায়। তা দিয়েই তারা নেমে পড়ে বিশ্বকাপে।
তাদের এই উঠে আসা, তাদের খেলাধুলার এই প্রেমে মুগ্ধ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলও (আইসিসি)। ভানুয়াতুর মতো দলগুলোকেই নারী বিশ্বকাপে চায় আইসিসি। এজন্য নিজেদের উদ্যোগের খবরও জানিয়েছেন আইসিসি প্রধান নির্বাহী জিওফ অ্যালারডিস।অক্টোবরে নারীদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ। রোববার ট্রফি উন্মোচন ও সূচি প্রকাশ করে তারা।
অনুষ্ঠানে আইসিসির প্রধান নির্বাহী জিওফ অ্যালারডিস বলেছেন, ‘আমি জানি অক্টোবরে এখানে যে টুর্নামেন্টটা হচ্ছে সেটা ১০ দলের। নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরের আসর কিন্তু ১২ দলের হবে, এমনকি এমন আলোচনাও আছে সেটা আরও বাড়ানো যায় কি না। এমনকি আইসিসি ওমেন্স চ্যাম্পিনশিপও এখন দশ দলের হয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডকে নেওয়া হয়েছে প্রথমবারের মতো, যেন তারা আরও বেশি নিজেদের মেলে ধরতে পারে। একই সঙ্গে দুনিয়ার সেরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে নিজেদের একই আঙিনায় দেখে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।’
‘আমার মনে হয় এটা হতে সময় লাগবে। আইসিসি এমন একটা কাঠামো তৈরি করছে কোন দলগুলো প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারে। যদি আপনি শেষ কয়েক বছর ধরে অ্যাসোসিয়েট মেম্বারদের দেখেন, ছেলেদের সমান সংখ্যকই নারী দলও আছে। এজন্য প্রতিদ্বন্দ্বীতার ফ্রেমওয়ার্কটা আছে। কিছু দল ভালো পারফর্ম করে কোয়ালিফায়ারসে আসতে পারে। আমরা উন্নতি করা দলগুলোতে সুযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছি যেন তারা বড় মঞ্চে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারে। কারণ ওসব দেশে ক্রিকেট প্রমোট করার জন্য এটাই সেরা উপায়, তাদের বিশ্বকাপে নিয়ে আসা। এটাই আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ।’– যোগ করেন অ্যালারডিস।
এদিকে আফগানিস্তান ক্রিকেট দল বিশ্ব ক্রিকেটে দাপট দেখালেও তাদের নারী দল এখনও তৈরি করতে পারেনি আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই তাদের নারী দল তৈরি হচ্ছে না বলে খবর। পুরো বিষয়টি আইসিসি ছেড়ে দিয়েছে তাদের বোর্ডের ওপর, ‘এই মুহূর্তে আমাদের সদস্য আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড নারী দল তৈরি করতে পারছে না। আর কিছু বদল না আসা পর্যন্ত এই পরিস্থিতিই থাকবে। এমনও না যে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আগে নারী ক্রিকেট দল করেনি, তারা কেবল এই সময়ে এসে পারছে না।’
বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ আয়োজন হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে গ্যালারি ভর্তি দর্শকের প্রত্যাশা করছেন আইসিসির শীর্ষ কর্তা, ‘আমার মনে হয় এটা একটা দারুণ সুযোগ অক্টোবরে টুর্নামেন্টের সময় মাঠ ভর্তি করার। এখানে যে অধিনায়করা আছে তারা বিভিন্ন দেশে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেছে। কিছু বড় ম্যাচে ও ফাইনালে আমাদের অভূতপূর্ব দর্শক সাড়া ছিল। একটা জিনিস আমরা এবার দেখতে চাই, পুরো ২৩ ম্যাচ ধরেই দর্শক থাকবে।’
‘আমার মনে হয় বাংলাদেশ ও এখানে ক্রিকেটের প্রতি যে প্যাশন, ওরকম কিছু করার সুযোগ আছে। আমাদের দর্শক উপস্থিতি বাড়াতে হবে। শেষ ছয় বা সাত বছরে আমরা দারুণভাবে এগিয়ে গেছি। আমার মনে হয় অক্টোবরের এই বিশ্বকাপ মেয়েদের বড় ইভেন্টে দর্শক পূর্ণ করার পরের পদক্ষেপ হতে পারে।’-যোগ করেন অ্যালারডিস।