ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে থাকা কারাগারটিতে এখন বন্দির সংখ্যা অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি। এই কারাগারে কর্মরত এক ইসরায়েলি বন্দিদের দুটি ছবি তুলেছিলেন। সেই দৃশ্য এখন তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
একটি ছবিতে দেখা গেছে, ধূসর ট্র্যাকস্যুট পরা ফিলিস্তিনি পুরুষদের সারি বেঁধে কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা একটি জায়গায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের সবার চোখ বাঁধা। তাদের মাথার ওপর ফ্লাডলাইটের তীব্র আলো।
কারগারটিতে কর্মরত এক ইসরায়েলি জানিয়েছেন, বন্দিদের রাখার স্থানটি দুর্গন্ধে পূর্ণ। এখানে পুরুষদের কথা বলা নিষেধ। তাই তারা নিজের সঙ্গে নিজেই বিড়বিড় করে কথা বলেন।
ওই ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল তাদের যেন নড়াচড়া করতে দেওয়া না হয়। তাদের সোজা হয়ে বসতে হবে। তাদের কথা বলতে দেওয়া হবে না। তাদের চোখ বাঁধা থাকবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, রক্ষীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল চিৎকার করে ‘উসকট’ বলতে,যার অর্থ চুপ থাক এবং ‘সমস্যাযুক্ত লোকদের বাছাই করতে এবং তাদের শাস্তি দিতে।’
এখানে থাকা অনেক বন্দির হাতে সারাক্ষণ হাতকড়া থাকে। টানা আবদ্ধ থাকায় অনেক সময় অকেজো হয়ে যায় বিধায় বন্দিদের হাত কেটে ফেলতে হয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের জন্য এই বন্দিশিবির গবেষণার স্বর্গরাজ্য। তাদের আনাড়ি চিকিৎসার কারণে বন্দিদের পঁচন ধরে যাওয়া অঙ্গ কেটে ফেলতে হয়। এখানকার বাতাসে ভেসে বেড়ায় বন্দিদের পঁচে যাওয়া অঙ্গের দুর্গন্ধ।
সিএনএন গোপন তথ্য ফাঁসকারী তিনজন ইসরায়েলির সঙ্গে কথা বলেছে। তারা গাজায় ইসরায়েলের কট্টরপন্থী নীতির সমর্থক গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে আইনি প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিশোধের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই কথা বলেছেন। তবে তারা কেউ নিজেদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেননি।
তাদের বিবরণ অনুসারে, গাজা সীমান্ত থেকে প্রায় ১৮ মাইল দূরে অবস্থিত কারাগারটি দুই ভাগে বিভক্ত- একটি অংশে গাজা থেকে আনা প্রায় ৭০জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে চরম শারীরিক নিপীড়নের মধ্যে রাখা হয় এবং একটি ফিল্ড হাসপাতাল যেখানে আহত বন্দিদের তাদের বিছানায় বাঁধা হয়। এই বন্দিদের ডায়াপার পরিয়ে রাখা হয় এবং স্ট্র এর মাধ্যমে খাওয়ানো হয়।
হাসপাতালের অংশে কাজ করা এক ইসরায়েলি বলেন, ‘মানুষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ এমন সবকিছু তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তথ্য সংগ্রহের জন্য এদের মারাধর করা হয় না। প্রতিশোধের জন্য তাদের মারধর করা হয়। এটি হচ্ছে, ৭ অক্টোবর যা করেছিল (ফিলিস্তিনিরা) তার জন্য শাস্তি এবং শিবিরে আচরণের শাস্তি।’
কারাগারটিতে রক্ষী হিসাবে দায়িত্ব পালন করা আরেক ইসরায়েলি জানান, রাতে রক্ষীরা ঘুমন্ত বন্দিদের ওপর কুকুর ছেড়ে দিত। বন্দিদের সেলে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে মারত সেনারা। এতে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়তো বন্দিরা।
কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি চিকিৎসক আল-রান বলেন, ‘আমাদের যখন তার দিয়ে বেঁধে আটকানো হয়েছিল, তখন তারা কুকুরগুলোকে ছেড়ে দিত। এগুলো আমাদের মধ্যে চলাচল করতো এবং আমাদের শরীরের ওপর দিয়ে হেটে যেত। আপনি আপনার পেটের ওপর ভর দিয়ে শুয়ে থাকবেন, আপনার মুখ মাটিতে চাপা থাকবে। আপনি নড়াচড়া করতে পারবেন না এবং তারা আপনার উপরে চলে যাচ্ছে।’
ইসরায়েলি ওই কারারক্ষী বলেন, ‘এটি ছিল সামরিক পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট যারা তথাকথিত অনুসন্ধান চালাতো। কিন্তু আদতে এটি তাদের আঘাত করার একটি অজুহাত ছিল। এটা একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ছিল। মানুষের চিৎকার আর কুকুরের ঘেউ ঘেউ।’