ক্যাম্পাস

‘মা বলেছেন বলেই পেরেছি’

মা শব্দটি অনেক ছোট হলেও এর তাৎপর্য অনেক বেশি। প্রত্যেক সন্তানের জীবনের সঙ্গেই মা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। মা’কে ছাড়া জীবন কল্পনা করাই যেন একটা দুঃস্বপ্নের মতো। প্রত্যেক সন্তানের কাছেই তার মা শ্রেষ্ঠ, ঠিক তেমনি আমার কাছেও আমার মা শ্রেষ্ঠ। যার স্থান আর অন্য কেউ নিতে পারবে না। আসলে মা হলেন এমনই একজন মানুষ, যিনি অন্য সবার স্থান নিতে পারেন। কিন্তু অন্য কেউ তার স্থান নিতে পারেন না।

আমার মা আত্নবিশ্বাসী এবং অত্যন্ত সাহসী একজন নারী। ছোট থেকে দেখে আসছি, তিনি কোনো কিছুতেই সহজে হার মেনে নেন না। ছোটবেলা থেকেই আমার মা আমাকে শিখিয়েছেন, কীভাবে আত্নবিশ্বাসী হতে হয়, কীভাবে হার না মেনে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়।

মা প্রতিনিয়ত আমার এবং আমার ভাইয়ের জন্য যে পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তা কয়েক শব্দে লিখে শেষ করা যাবে না। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষিকা। আমাদের গ্রামের স্কুলেই তিনি শিক্ষকতা করেন। প্রাথমিক শেষে যখন আমি মাধ্যমিকে পদার্পণ করি, তখন তিনি গ্রাম ছেড়ে জেলা শহরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ গ্রামের দিকে মাধ্যমিকের ভালো শিক্ষক ছিলেন না। আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব কয়েক মিনিট। কিন্তু জেলা শহরে চলে যাওয়ার পর শুধু আমার এবং আমার ভাইয়ের পড়াশুনার কথা চিন্তা করে প্রতিদিন প্রায় ৫০ কি.মি. পথ মা’কে যাতায়াত করতে হতো। স্কুলে যাওয়ার আগে রান্না করে রেখে যাওয়া, আবার এতো পথ যাতায়াত করে এসে রান্না করা হয়তো একজন মায়ের পক্ষেই সম্ভব। মা ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনার উপর এতো গুরুত্ব দিয়েছেন বলেই হয়তো আজ এতো দূর আসতে পেরেছি। 

দিয়াগো ম্যারাডোনার মা নিয়ে একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে- ‘আমার মা মনে করেন আমিই সেরা। আর মা মনে করেন বলেই আমি সেরা হয়ে গড়ে উঠেছি।’

এ উক্তিটির সঙ্গে আমার জীবনের একটি অংশের মিল রয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার সময় পুরো বাংলাদেশে অনেক কঠিন একটা প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, সেটা আমাদের সবারই জানা। প্রথমেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হলো এবং ফলাফল আশানুরূপ হলো না। তখন আমার মা একবার প্রশ্ন করেননি, কেনো হলো না? উল্টো,  মা আমাকে সাহস দিয়েছেন এবং তখন একটা কথা বলেছিলেন, যা আজও মনে আছে। সেটি হলো- ‘পরবর্তীতে যতগুলো জায়গায় পরীক্ষা দিবে সবগুলোতে টিকবে, মা'য়ের দোয়া কখনো বিফলে যায় না।’

সেদিন আমার মা সাহস দেওয়ার কারণে আর আমার উপর বিশ্বাস রাখার জন্যই হয়তো আজ আমি তার কথা রাখতে পেরেছি। মায়ের ওই কথার পর যতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েছি, সবগুলোতেই আশানুরূপ ফল পেয়েছি। শুধু এই ঘটনাই নয়, আমার জীবনে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে, যেখানে আমার মা সাহস দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘তুমি পারবে।’ আর সেজন্যই আমি পেরেছি।

পরিশেষে বলতে চাই, এমন একজন মায়ের সন্তান হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হয়। ইঞ্জিন ছাড়া যেমন জাহাজ কল্পনা করা যায় না, ঠিক তেমনি আমিও আমার মা'কে ছাড়া আমার জীবন কল্পনা করতে পারি না। আমার মা’সহ পৃথিবীর সব মা’কে জানাই আমার শ্রদ্ধা ও সালাম।

লেখক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, সেশন ২০২১-২২, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়