গাজায় ব্যাংকনোটের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ইসরায়েল নগদ অর্থ সরবরাহ বন্ধ করার পরে এবং ছিটমহলের বেশিরভাগ ব্যাংকগুলো যুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্থ বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে এ সংকট তীব্র হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গাজায় অপরাধী চক্র মাথাচাড়া দিয়েছে উঠেছে এবং মুনাফাখোরদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সূত্রের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের সাত মাসেরও বেশি সময় পরে গাজায় এখন মাত্র কয়েকটি এটিএম চালু রয়েছে। আবার এগুলোর বেশিরভাগই দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে। এই শহরটিতে ১৪ লাখ ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী সম্প্রতি বেসামরিক নাগরিকদের শহরের দক্ষিণাঞ্চলের কিছু অংশ থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। মঙ্গলবার এই এলাকাগুলোতে ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক প্রবেশ করেছে।
যুদ্ধ শুরুর পরপর ইসরায়েল গাজায় আন্তর্জাতিক ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এপ্রিল ও মে মাসের প্রথম দিকে ত্রাণ সরবরাহ সীমিত পরিসরে চালু করা হয়। একইসময় কিছু বাজারে মৌলিক পণ্যের সরবরাহের সুযোগ দেয় ইসরায়েল।
তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও ত্রাণকর্মীরা জানিয়েছেন, অনেকের কাছে পণ্য কেনার জন্য নগদ অর্থ ছিল না। এখন বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাফাহতে ইসরায়েলের আক্রমণের পর আবার সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে এবং ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
তিন পশ্চিমা সাহায্য কর্মী এবং সাতজন বাসিন্দা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, শত শত, কখনও কখনও হাজার হাজার হতাশ মানুষ এটিএম-এর বাইরে ভিড় করে। বুথে প্রবেশের জন্য তারা কখনও কখনও সারাদিন অপেক্ষা করে। ফিলিস্তিনি পুলিশের অনুপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সশস্ত্র দলগুলো কখনও কখনও অগ্রাধিকার প্রদানের জন্য বাড়তি অর্থ দাবি করে।
রাফাহ-এর বাসিন্দা আবু আহমেদ জানান, তিনি দীর্ঘ সাত দিন অপেক্ষা করেছিলেন এবং এতটাই হতাশ হয়েছিলেন যে তিনি গ্যাং সদস্যদের কাছে সাহায্যের জন্য গিয়েছিলেন। এই গ্যাংগুলোর কাছে ছুরি ও বন্দুক থাকে।
আবু আহমেদ বলেন, ‘আমি এটিএম বুথে প্রবেশেরর জন্য এবং আমার নগদ অর্থ পাওয়ার জন্য তাদের একজনকে আমার বেতনের ৩০০ শেকেল (ইসরায়েলি মুদ্রা) দিয়েছি।’
সরকারী কর্মচারী হিসাবে আবু আহমেদ প্রতি মাসে তিন হাজার ৫০০ শেকেল বেতন হিসাবে পান।
বাসিন্দারা জানান, কিছু ব্যবসায়ী সংকট থেকে মুনাফা করছেন। কিছু মানি এক্সচেঞ্জ স্টোরের মালিক এবং কিছু ফার্মাসিস্ট যাদের ক্রেডিট কার্ড মেশিন রয়েছে, তারা নগদায়নের জন্য অতিরিক্ত অর্থ নিচ্ছে।
ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর একটি ইউনিয়ন প্রতিনিধি আজমি রাদওয়ান জানান, কিছু ব্যবসায়ী ব্যাংকের অনুপস্থিতিতে বেতন নগদ করার জন্য গাজা সিটি ও উত্তর কমিশনের কর্মীদের কাছ থেকে ২০ বা ৩০ শতাংশ কমিশন কেটে নিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এটি খুবই বিপজ্জনক। যে বেতন একজনের সন্তানদের খাওয়ানোর কথা, তার এক চতুর্থাংশ এই ব্যবসায়ীদের কাছে যাচ্ছে।’
গাজায় ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রায় ১৩ হাজার কর্মী রয়েছে।
আবু মুহে নামের আরেক বাসিন্দা জানান, কখনও কখনও মানি চেঞ্জাররা ফি কেটে নেওয়ার পরে জানায়, এখন পর্যাপ্ত শেকেল নেই। এই অজুহাত দেখিয়ে তারা উচ্চমূল্যে ডলার নিতে বাধ্য করে।