মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সরকারি কাজের ‘গতি’ বজায় রাখার কথা উল্লেখ করে ২৬১টি নতুন জিপ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রতিটি গাড়ির দাম পড়বে ১ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ, ২৬১টি জিপ কিনতে মোট ব্যয় হবে ৩৮১ কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।
এর আগে, ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি সভায় প্রস্তাবটি ফেরত পাঠায়। এ বিষয়ে পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই সভার সারসংক্ষেপ পাঠানো হলে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ক্রয় ও অর্থনৈতিক অধিশাখা থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে অবহিত করে ‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের ব্যবহারের জন্য জরুরি প্রয়োজনে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণ করে ২৬১টি জিপ গাড়ি কেনার নীতিগত অনুমোদন প্রস্তাব’ শীর্ষক চিঠি দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভার (২৩তম) কার্যবিবরণীর সিদ্ধান্ত সারসংক্ষেপ আকারে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলে তিনি নির্দেশনা প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ৬টি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছে—
২৬১টি গাড়ি কিনতে কী পরিমাণ টাকার প্রয়োজন? জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ে কি কোনও গাড়ি নেই? কোথায় কয়টি গাড়ি রয়েছে? সমাপ্ত প্রকল্পের ব্যবহার করা গাড়িগুলো কী কী কাজে ব্যবহার হচ্ছে? গাড়ি কেনার প্রস্তাবে মূল্য উল্লেখ করা হয়নি কেন?
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে এই চিঠি দেওয়া হয় ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর। এরপর গত জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে আবার সরকার গঠন করেছে। সেটাও প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হয়েছে।
বুধবার (১৫ মে) অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হবে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা ও ক্রয় কমিটির সভা। ওই সভার নোটিশ ইতোমধ্যে জারি হয়েছে। এতে ২৬১টি জিপ গাড়ি কেনার কোনও প্রস্তাব নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সভার টেবিলে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হবে। তবে, প্রস্তাবের সারসংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বা প্রধানমন্ত্রী গাড়ি কেনার সম্মতি দিয়েছেন কি-না, সে বিষয়ে কোনও কিছু উল্লেখ নেই।
সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, দেশের সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। কিন্তু জরুরি প্রয়োজন দেখিয়ে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব প্রথমে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় নীতিগত অনুমোদন নেওয়া হবে। তবে, নতুন সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, প্রস্তাবটি অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।
জানা গেছে, সরকারি কাজের গতিশীলতা বজায় রাখতে যেসব গাড়ির আয়ুষ্কাল ১৪ বছর বা তদূর্ধ্ব এবং ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে; তার প্রতিস্থাপক হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ব্যবহারের জন্য সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর কর্তৃক ২৬১টি জিপ গাড়ি কেনা হবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিগত দুই বছর সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর কোনও প্রকার গাড়ি কিনেনি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে ব্যবহারের জন্য ২৬১টি জিপ কেনার প্রস্তাব পাঠালে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাজেটে ৩৮০ কোটি ৬৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। চলতি অর্থবছরে ২৬১টি জিপ কেনার জন্য (ট্যাক্স, ভ্যাট ও রেজিস্ট্রেশনসহ অনূর্ধ্ব ২৭০০ সিসি) ওই টাকা ব্যয়ের সম্মতি দেওয়া হয়। এরপর দরপ্রস্তাব দাখিলের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছে চিঠি পাঠানো হয়।
সূত্র জানায়, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২৬১টি মিৎসুবিশি পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স জিপ গাড়ির দাম (ট্যাক্স, ভ্যাট ও অ্যাক্সেসরিজসহ ২৪৭৭ সিসি) ১ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার এবং রেজিস্ট্রেশন ফি (সার্ভিস চার্জসহ) প্রতিটি ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৫০ টাকাসহ মোট ৩৮৫ কোটি ৭১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫০ টাকা প্রস্তাব করে।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে বিস্তারিত আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে প্রতিটি মিৎসুবিশি পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স জিপ গাড়ির প্রতিটির মূল্য (ট্যাক্স, ভ্যাট, অ্যাক্সেসরিজসহ এবং রেজিস্ট্রেশন ফি ব্যতীত) ১ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা দরে, ২৬১টি জিপ গাড়ি মোট মূল্য ৩৮১ কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার টাকায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে কেনার বিষয়ে সুপারিশ করে। এতে গাড়ি নির্মাতা সংস্থা ও ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ উভয়ই সম্মত হয়। অর্থাৎ, ২৬১টি মিৎসুবিশি পাজেরো গাড়ি কিনতে ব্যয় হবে ৩৮১ কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।