সারা বাংলা

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বুকজুড়ে রঙিন ফুলের শোভা

সড়কের দুই ধারে সারি সারি গাছ। তাতে ফুটে আছে রাধাচূড়া, জারুলসহ নানান জাতের ফুল। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে চোখ পড়তেই যে কারও মনে প্রশান্তি আসে; সুবাসে মেতে ওঠে মন।

সড়কে চলাচলকারীরা এখন ফুলের সৌন্দর্যের মুগ্ধতা নিয়েই পাড়ি দিচ্ছেন গন্তব্যে। অপরূপ সৌন্দর্যের চাদরে ঘেরা দেশের লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। সড়ক দিয়ে গাড়িযোগে যাতায়াতে যাত্রীদের যেন অভ্যর্থনা জানাচ্ছে নানা বৃক্ষরাজি ও ফুল।

পিচঢালা প্রাণহীন ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেন মহাসড়কের বুকজুড়ে যেন রূপের পসরা সাজিয়ে বসেছে সবুজ প্রকৃতি। সড়ক বিভাজকে নানা প্রজাতির ফুল গাছে ফুটেছে রঙিন ফুল। নান্দনিক ফুলের মেলায় বর্ণিল সড়কদ্বীপে পরিণত হয়েছে মাইলের পর মাইল। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এর সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেছে। মহাসড়ক এখন সৌন্দর্যের অপরূপ দৃশ্যকল্পে পরিণত হয়েছে। যানবাহনের জানালা দিয়ে বাইরে চোখ পড়তে নিমেষেই যে কারও মনে প্রশান্তি চলে আসে। বাতাসে ভেসে আসে সুবাস।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক লেনের গাড়ির হেডলাইটের আলো যাতে বিপরীত লেনের গাড়ির ওপর না পরে সেজন্য ডিভাইডারের ওপর রোপণ করা হয় বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ। ফলে মহাসড়কের কোথাও কোথাও দেখা যায় ফুলের বাগান। আবার কোথাও কোথাও সবুজ বৃক্ষের সমারোহ। এসব ফুল গাছের মধ্যে রয়েছে হৈমন্তি, কুর্চি, টগর, রাধাচূড়া, কাঞ্চন, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, কদম, বকুল, পলাশ, কবরী, ক্যাসিয়া ও জারুল।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেইট পর্যন্ত প্রায় ১৪৩ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ লাগায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। এর মধ্যে বেশি ফুলের দেখা মিলছে কুমিল্লা, ফেনী অংশে।  

মহাসড়কে চলাচলকারী কলেজ শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতিদিন কুমিল্লা থেকে মুন্সিগঞ্জে যাতায়াত করি। মহাসড়কের মাঝে মাঝে ফুলের বাগান দেখতে খুব ভালো লাগে। এমন সুন্দর ফুলের বাগানে দিন দিন মহাসড়কের আকর্ষণ বাড়ছে।

প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন নিয়মিত চলাচল করে এ মহাসড়ক দিয়ে। দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন বলা হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে। বাস, ট্রাক ও মাইক্রো বাসসহ যানবাহনগুলো যখন মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে তখন ফুলগাছগুলো বাতাসে দুলতে থাকে। যেন দুলে দুলে অভ্যর্থনা জানায় মহাসড়কে চলাচল করা বিভিন্ন ধরনের যানবাহনগুলোকে। সড়কের সৌন্দর্যে এতটাই মুগ্ধ যাত্রীরা যে অনেক সময় বাস থেকে নেমে ফুল গাছের সঙ্গে ছবি তুলেন।

প্রতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে ফেনীতে বেসরকারি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরিরত একজন যাত্রী রাশেদ খান বলেন, আমি প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ফেনীতে আসি এবং শনিবার বিকেলে বা রোববার ভোরে ঢাকা চলে যাই। সড়কের মাঝখানে ডিভাইডার থাকার কারণে দুর্ঘটনা কম হয়। আবার ডিভাইডারে অনেক রকমের ফুলের সমারোহ থাকায় অনেক সুন্দর লাগে। বাস কখনো জ্যামে আটকা পড়লে যাত্রীরা তাদের মোবাইল ফোন দিয়ে বাসের জানালা দিয়ে ফুলের ছবি তুলতে দেখা যায়।

ঢাকা জেলা পুলিশে চাকরিরত হৃদয় হাসান বলেন, ঢাকা থেকে কুমিল্লা প্রতি মাসে ৩/৪ বার আসা যাওয়া করি। ডিভাইডারের মাঝখানে বাহারি রকমের ফুলগাছের হরেক রকমের বাহারি ফুলের শোভা মহাসড়কের সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করেছে।

ময়নামতি হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডিভাইডারে লাগানো ফুলগুলো সত্যি দেখতে মনোমুগ্ধকর। রাস্তায় জ্যাম থাকলে যাত্রীদেরকে ফুলগাছের সাথে ছবি তুলতে দেখা যায়। আবার অনেক যাত্রী বাসের জানালা দিয়েও ছবি তোলেন।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, মহাসড়ক ডিভাইডারের মাঝখানে বিভিন্ন ফুলগাছ থাকে; তাই আমরাও পরিবেশের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য এবং যানবাহনে থাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীদের যাতে আনন্দ দেয় সেজন্য গাছ রোপণ করেছি।

হাইওয়ে পুলিশ রিজিয়ন (চট্টগ্রাম) অতিরিক্ত ডিআইজি খাইরুল ইসলাম বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি বাহারি ফুলের সৌন্দর্য ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে। জারুল ফুল বাংলার চেরি ফুল হিসেবে বিবেচিত হয়। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ডিভাইডারে ফুলগাছগুলোর সৌন্দর্যে ভ্রমণকারীরা বিমোহিত।