অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনির হোসেনের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব করেছেন পরিষদের আট সদস্য। মঙ্গলবার (১৪ মে) জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন তারা।
সদস্যরা হলেন- সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড নং ১ ও ২ এর সদস্য সাহিদা খানম এবং ইসরাত জাহান তামান্না। সাধারণ ওয়ার্ড নং ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ এর সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন সরকার, মো. ওবাইদুল কবির মৃধা, রাজীব আহমেদ, মো. আমান উল্লাহ ভূঁইয়া, একেএম জহিরুল হক এবং মেরাজ মাহমুদ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী জেলা পরিষদ নির্বাচনের পর সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন। নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচিত সদস্যদের প্রতিমাসে একবার মিটিং করার কথা থাকলেও ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম মিটিংয়ের পর এখন পর্যন্ত আর কোনো মিটিং হয়নি।
মাসিক মিটিংয়ে সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে জেলা পরিষদের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে মিটিং না হওয়ায় জেলা পরিষদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান সদস্যরা।
মাসিক মিটিংয়ের রেজুলেশন গোপন রেখে চেয়ারম্যান উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ না করে ১০ কোটি টাকার এফডিআর করেন। পরবর্তী ফের সদস্যদের মতামত ছাড়া এবং মাসিক মিটিং ছাড়া ২০ কোটি টাকার এফডিআর করেন।
২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেট ও ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনের এজেন্ডা থাকলেও উপস্থিত সকল সদস্যদের একটি উপস্থিতি হাজিরা শিটে স্বাক্ষর নিয়ে নেন। কিন্তু সভায় বাজেট সংক্রান্ত কোনো আলোচনা না করে সভা শেষ করে দেন।
সদস্যরা একাধিকবার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে বলার পরেও ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে কত টাকার বাজেট ও কত টাকা আয়-ব্যয় এবং উন্নয়ন খাতে কত টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তা অবহিত করা হয়নি।
এ বিষয়ে সদস্যরা ওই বাজেট এবং উন্নয়ন প্রকল্পের রেজুলেশন চাইলে, চেয়ারম্যান তাদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ, হুমকিসহ অপমান করেন। এছাড়াও চেয়ারম্যান একতরফা ভাবে কোটেশন, অফিসের সকল কর্মকাণ্ড, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতায় তার ভাতিজা, ব্যক্তিগত ড্রাইভার এবং তার আত্মীয়স্বজনসহ মোট ১১ জনকে মাস্টাররোলে চাকরি দেন, যা সদস্যরা অবগত নন।
২০২২- ২০২৩ অর্থবছরে চেয়ারম্যানের আপ্যায়ন বিল ১০ লাখ টাকা ব্যয়ের নির্দেশনা থাকলেও তিনি ১৯ লাখ টাকা প্রদান করেন। এছাড়া পরিষদের সকল সদস্য চেয়ারম্যানের নিকট লাঞ্ছিত, বঞ্চিত ও একাধিকবার অপমানিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব করেছেন।
নরসিংদী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনির হোসেন বলেন, জেলা পরিষদের একটি টাকাও আমি খাইনি। সদস্যরা হয়তো রাগে, ক্ষোভে ও অভিমানে আমার প্রতি এসব অভিযোগ এনেছেন।
তিনি বলেন, অভিযোগে মাস্টাররোলে ১০ জনকে নিয়োগ ও ৩০ কোটি টাকা এফডিআর করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখেন, এই এফডিআর কার স্বার্থে এবং কার নামে করা। যদি আমার নামে করা হয়ে থাকে তাহলে আমি দোষী। কিন্তু আমি সেটা করিনি। এফডিআর করা ৩০ কোটি টাকা থেকে মাসে ৫৫ লাখ টাকা লাভ আসবে। এই লাভের টাকা পরিষদের কাজে ব্যয় করা হবে। এজন্য টাকা অলসভাবে ফেলে রাখিনি।
তিনি আরও বলেন, মাস্টাররোলে কোন কোন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দেখেন। এর মধ্যে পাঁচটি শূন্য পদে। যেহেতু অভিযোগ হয়েছে, তদন্ত হোক। যদি প্রমাণ হয় আমি দোষী, যে শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেব।