খেলাধুলা

লিটন-শান্তদের নিয়ে হাথুরুসিংহের দুশ্চিন্তা, তবে দলের প্রস্তুতিতে খুশি

হালকা আকাশি রঙের শার্ট, ছাই রঙা প্যান্টের সঙ্গে ইন করা। পায়ে খয়েরি স্নিকার্স। শর্টস আর প্র্যাকটিস কিটে অভ্যস্ত চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে চেনার উপায় নেই। বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে ফটোসেশন শেষে হাসিমুখে এগোচ্ছিলেন শের-ই-বাংলার সংবাদ সম্মেলন কক্ষের দিকে।  

বিশ্বকাপ খেলেতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার আগে বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন খোশ মেজাজে। যেতে যেতে সংবাদকর্মীদের সৌজন্যমূলক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন মিষ্টি হেসে। সংবাদ সম্মেলনেও ছিলেন উজ্জীবিত, বরাবরের মতো হাঁটেননি বাঁকা উত্তরের পথে। 

বিশ্বকাপের বিমানে ওঠার আগে শিষ্যদের প্রস্তুতিও ভীষণ খুশি হাথুরুসিংহে। শুরুর দিকেই প্রশ্ন ছিল, জিম্বাবুয়ের সিরিজে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিয়ে সাকিব আল হাসানের করা মন্তব্য প্রসঙ্গে। সাকিব জানিয়েছিলেন, এই সিরিজ দিয়ে বিশ্বকাপ বিবেচনা করলে ভুল, জিম্বাবুয়ে সিরিজ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য আদর্শ না এটাও বলেছেন সাকিব। 

দলের সবচেয়ে বড় তারকার সঙ্গে একমত হননি হাথুরুসিংহে। ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও সার্বিক প্রস্তুতিতে খুশি প্রধান কোচ, আমি এমনটা মনে করি না। আমার কাছে ম্যাচ খেলা মানেই ভালো প্রস্তুতি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যেকোনো ম্যাচ কঠিন হয়ে উঠতে পারে। শক্তিমত্তায় পার্থক্য থাকতেই পারে, তবে আমি মনে করি প্রস্তুতি বেশ ভালো হয়েছে।’

‘আমার মতে আমাদের প্রস্তুতি বেশ ভালো। চট্টগ্রামে ক্যাম্প করেছি, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচটি ম্যাচ খেলেছি, প্রায় সবাইকে খেলার সুযোগ দিতে পেরেছি। কয়েকজনের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে একটু দুশ্চিন্তা আছে। তবে সব মিলে দলের প্রস্তুতিতে আমি খুশি’-আরও যোগ করেন হাথুরুসিংহে।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতে ৪-১ ব্যবধানে। কোনো ম্যাচেই বাংলাদেশের ব্যাটাররা এক হয়ে খেলতে পারেননি। কোনোদিন শুরুতে ধস, কোনোদিন মাঝে আবার কোনোদিন শেষে। মাত্র ১টি ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে ৫০ পেরোতে পেরেছে লাল সবুজের দল।

এই সিরিজে বাংলাদেশ ফিফটি দেখেছে মাত্র ৪টি। তার মধ্যে দুটিএ সেছে তানজিদ হাসান তামিমের ব্যাট থেকে। ১টি করে ফিফটি করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-তাওহীদ হৃদয়। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাসরা নিজের নামের পাশে সুবিচার করতে পারেননি। হাথুরুসিংহের দুশ্চিন্তার কারণ যে লিটন-শান্তদের ফর্ম সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।

হাথুরুসিংহে বলেন, ‘কিছু ম্যাচে ব্যাট হাতে আমরা ভালো শুরু পাইনি। কিছু ম্যাচে আবার শুরু ভালো হয়নি, কিন্তু ফিনিশিং ভালোই হয়েছে। কয়েকজন ভালো রান করেছে, ভালো ব্যাট করেছে। টি-টোয়েন্টিতে যেকোনো কিছু হতে পারে, এটা অন্য দুই ফরম্যাটের মতো নয়। টপ অর্ডার রান করলে ভালোই লাগবে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের আগে আমাদের ৫টি ম্যাচ আছে। এই জিনিসগুলো নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাব।’ 

আজ রাতে যুক্তরাষ্ট্রর উদ্দেশে উড়াল দেবে বাংলাদেশ। এরপর দেশটির বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলবে শান্তর দল। সিরিজ শেষে বিশ্বকাপের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ। একটি হবে ভারতের বিপক্ষে। লিটন-শান্তদের বিশ্বকাপে ভালো কিছু করতে হলে এসব ম্যাচে নিজেদের হারানো ফর্ম ফিরিয়ে আনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ আর দুটি প্রস্তুতি ম্যাচের মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপের লড়াই শুরুর আগে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে বাংলাদেশ। হাথুরুসিংহে বলেন, ‘কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমরা আমেরিকায় বোধহয় আগে ম্যাচ খেলিনি। যুক্তরাষ্ট্রে খেলা সবার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। ঐ কন্ডিশন, আবহাওয়ায় মানিয়ে নেওয়া, ভিন্ন টাইম জোন, এগুলো মানিয়ে নেওয়া জরুরি।’ 

‘আমরা সব ম্যাচই জিততে চাই। মূল খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিতে হবে, ওয়ার্ক লোডের কথা মাথায় রাখতে হবে। শারীরিক ও মানসিক বিশ্রামের পাশাপাশি কন্ডিশন মানিয়ে নেওয়ার দিকেই মূল মনোযোগ থাকবে’ -আরও যোগ করেন।