ভক্তরা তার নাম দিয়েছেন সাইলেন্ট কিলার। কেউ কেউ ফিনিশার বলেও আনন্দ পান। যে যে-ই নামে ডাকুক না কেন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যেভাবে থাকার কথা সেভাবে আছেন।
নিজের কাজটা চুপিসারে করে যাচ্ছেন। কোনো রাগ-ডাক নেই। নেই কোনো বাড়তি চাওয়া-পাওয়া। আলোচনায় থাকার নাম গন্ধও নে-ই। বরং আড়াল হওয়ার যত চেষ্টা। নিরবে নিজের কাজ করে যাওয়ার যে চিত্র মাহমুদউল্লাহ এঁকেছেন তা রংধনুর সাত রংকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিশাল হয়েছে তার ক্যানভাস।
ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলাতেও হয়ে আছেন অটো চয়েজ। তরুণরা এসে চ্যালেঞ্জ জানালেও মাহমুদউল্লাহ নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন মাথা উচুঁ করে। তবে সব সময় তার গল্পটাও এ রকম ছিল না। ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার নেতৃত্বে খেলেছিল বাংলাদেশ। প্রত্যাশামাফিক পারফরম্যান্স না আসায় মাহমুদউল্লাহ দল থেকে বাদ পড়েন। পরের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেই তার নাম।
ঘুনাক্ষরেও তখন কেউ ভেবেছিল মাহমুদউল্লাহ দুই বছর পর আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবেন? এই ফরম্যাটে তার নামের পাশে দাঁড়ি টেনে দিয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু প্রবল আত্মবিশ্বাস, হার না মানা মনোবল, চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় মাহমুদউল্লাহ ফেরার গল্প লিখতে শুরু করেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম্যান্সের দ্যুতি ছড়িয়ে জায়গা করে নেন জাতীয় দলে। সেখানে অনবদ্য তার অবদান। তাতেই নাম লিখিয়ে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।
অষ্টম টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ ২০২৩ বিশ্বকাপ থেকে দলের নিয়মিত ক্রিকেটার। বাংলাদেশ ব্যর্থ হলেও মাহমুদউল্লাহ ছিলেন দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ৭ ইনিংসে ৫৪.৬৬ গড়ে করেছেন ৩২৮ রান। টি-টোয়েন্টি দলে ফিরতে তার ঢাল হয়ে আসে বিপিএল মঞ্চ। ফরচুন বরিশালের হয়ে ১৩ ইনিংসে প্রায় ৩০ গড়ে করেছেন ২৩৭ রান, স্ট্রাইক রেট ১৩৪.৬৫। পরিস্থিতি বিবেচনায় তার অবদান ছিল দলের জন্য কার্যকর। তাতে তার নামের পাশে টি-টোয়েন্টি দলেও ‘অটো চয়েজ’ শব্দটা যুক্ত হয়ে যায়।
এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ৩৮ বছর ১০১ দিন বয়সে মাহমুদউল্লাহ যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানে উঠার অপেক্ষায় তখন তার পাশে আস্থার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। দলের অন্যতম সিনিয়র ক্রিকেটারকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বড় দায়িত্ব দিয়েছেন কোচ, ‘সে এখন নিয়মিত খেলছে এবং তার ফিরে আসাটা দারুণ শক্তিশালী হয়েছে। বিশেষ করে দেখবেন, সে তার সেরা ক্রিকেটটা এখন খেলছে। ব্যাটিংয়ে তার অ্যাপ্রোচ অনেক পরিবর্তন এসেছে। দারুণ ফর্মে আছে। মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করার দায়িত্ব সে পেয়েছে। আশা করছি মধ্যভাগে যে ঝড়ো ব্যাটিংয়ের চাহিদা আছে এবং ফিনিশ করার যে দায়িত্ব সেটা সে ঠিকঠাক পালন করবে। এর আগেও সে সব ফরম্যাট এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে এই দায়িত্ব পালন করেছে।’
মাহমুদউল্লাহ হয়তো এবারই খেলতে যাচ্ছেন নিজের শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তালিকায় আসতে পারে সাকিবের নামও। দলের বর্তমান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত নিশ্চিত নন দুই সিনিয়রের পরিকল্পনা। তবে তাদেরকে বড় কিছুই উপহার দেওয়ার ইচ্ছা শান্তর, ‘জানি না এটাই তাদের শেষ বিশ্বকাপ কি না। এটা একটা ধারণা। আমরা যারা আছি, অপেক্ষাকৃত তরুণ, আমরা অবশ্যই চাইব, ওনারা এত লম্বা সময় ধরে খেলছেন, তাদের একটা ভালো স্মৃতি দিতে। ভালো একটা বিশ্বকাপ তাদের আমরা উপহার দিলাম, এটা অবশ্যই আমাদের দায়িত্ব।’