ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরির পেছনে না ছুটে মুরগি পালন ও ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে বিক্রি করে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন শামীম আল মামুন রনি নামের এক যুবক। টাইগার জাতের মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে তা অন্য খামারিদের কাছে বিক্রি করে এখন তিনি মাসে দুই লাখ টাকা আয় করছেন। তার কাছ থেকে বাচ্চা ও পরামর্শ নিয়ে অনেকেই শুরু করেছেন মুরগি লালন-পালনের কাজ।
শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার পশ্চিম লাভা গ্রামের হারেজ আলীর ছেলে শামীম। তার দুই ভাই চাকরি করলেও ২০২০ সালে শামীম শুরু করেন টাইগার মুরগি পালন। শুরুতে গাজীপুর থেকে ১০ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে ৬৫টাকা দরে ১৫০ পিস টাইগার মুরগির বাচ্চা কিনে এনে লালন-পালন শুরু করেন তিনি। এক বছর পরই তিনি গড়ে তোলেন ‘বন্ধন এগ্রো’ নামের প্রতিষ্ঠান। নিজের খামার থেকে প্রতি সপ্তাহে ৬০০-৭০০ ও মাসে প্রায় ৩ হাজার ডিম উৎপাদনের পর তা থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে বিক্রি করেন তিনি। প্রতিটি বাচ্চা ৭৫ টাকা করে বিক্রি করেন শামীম। এছাড়া, জন্ম নেওয়া বাচ্চার কিছুটা ঝুঁকি থাকে। যদি তিনি মুরগির বাচ্চা ঝুঁকি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করে দেন সেক্ষেত্রে প্রতিপিস মুরগির বাচ্চার দাম আরও ২০ টাকা বৃদ্ধি পায়। এই বাচ্চা বিক্রি করেই প্রতিমাসে তার আয় প্রায় দুই লাখ টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির পাশে খোলামেলা যায়গায় উচু করে শেড তৈরি করে টাইগার জাতের মুরগি পালন করছেন শামীম। খামারে আধুনিকতার ছোয়া দেওয়া হয়েছে। খামারের একপাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে পানির পাত্র। সারিবদ্ধভাবে রাখা রয়েছে কাঠের তৈরি খাবারপাত্র। অন্যপাশে রয়েছে ডিম পাড়ার জন্য আলাদা আলাদা খাঁচা। বিদ্যুৎ চলে গেলে রয়েছে জেনারেটরের ব্যবস্থা। শামীমের এই খামারে ৭ থেকে ৮কেজি ওজনেরও মুরগি রয়েছে।
শামীম বলেন, প্রথমে মাংসের জন্য মুরগি পালন শুরু করি। ওই মুরগি বিক্রি করে লাভবান হই। এরপর টাইগার মুরগি পালন করে ডিম উৎপাদন শুরু করি। বর্তমানে খামার থেকে প্রতিনিদি ১৫০টি ডিম পাই। ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কারণে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য আমি নিজেই তৈরি করি ইনকিউব্যাটর। মোট ২১ দিনের মধ্যেই ডিম থেকে পরিপূর্ণ বাচ্চা হয়।
তিনি আরও বলেন, একটি মুরগি থেকে প্রায় দুই বছরের মতো ডিম পাওয়া যায়। মুরগি ডিম দেওয়া বন্ধ করে দিলে তখন সেটিকে আমি মাংসের চাহিদা মেটাতে বাজারে বিক্রি করে দেই। যখন যেমন দর থাকে সে অনুযায়ী মুরগি বাজারে বিক্রি করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা রহুম আমিন বলেন, আমি এই খামার দেখে অভিভূত হয়েছি। আমি কিছু দিনের মধ্যেই একটি খামার করবো। আমি মাঝে মধ্যেই এখানে এসে মুরগি লালন-পালন পদ্ধতি শিখি। এই মুরগির রোগ কম হয় বিধায় ঝুঁকি কম। তাই আমি মুরগি পালনের সাহস করছি।
নালিতাবাড়ি থেকে আগত খামারি রমিজ উদ্দিন বলেন, আমি ৩০০ মুরগির বাচ্চার অর্ডার দিয়েছি। প্রথম দিকে একটু ঝুঁকি থাকায় আমি বাচ্চাগুলোকে এক সপ্তাহ পরিচর্যার পর এখান থেকে নিয়ে যাবো। আমি ডিম উৎপাদন করার জন্যই বাচ্চা নিচ্ছি।
শেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রেজওয়ানুল হক ভূঁইয়া বলেন, মুরগির ডিম উৎপাদন থেকে শুরু করে বাচ্চা ফুটানো, পরিচর্যা, বিক্রি সবকিছুই শামীম নিজেই করেন। তিনি ভালো করেই সব কাজ রপ্ত করেছেন। আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে তাকে। তার এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়।