আজ (২৩ মে) নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিন ইতনার ঠিক বিপরীতে মধুমতি নদীর ওপারে চরভাটপাড়া গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী (২২ মে) গণহত্যা, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটায়।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষ মুখো-মুখি হন চরভাটপাড়া গ্রামের কৃষক অনিল কাপালী। মা-বোনদের প্রতি অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে খালি হাতে ঝাপিয়ে পড়েন এক পাক-সেনার ওপর। বীর বাঙ্গালী অনিল কাপালী পাক-সেনার কাছ থেকে তার রাইফেল কেড়ে নিয়ে দৌড়ে যায় নদীর দিকে। মধুমতি নদীতে অস্ত্র ফেলে নিজে সাঁতার কেটে চলে আসে এপারে ইতনায়। পরের দিন পাক-সেনারা অনিল কাপালীকে ধরতে চরভাটপাড়া গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আত্মরক্ষার জন্য চরভাটপাড়ার মানুষ সেদিন বলেছিলো কাপালীর বাড়ি ইতনায়।
পরের দিন ইতনায় গণহত্যার পরিকল্পনা করে ৫টি নৌবহর নিয়ে পাক-সেনারা পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলে কাক ডাকা ভোরে। তারা ৫ ভাগে ভাগ হয়ে ঢুকে পড়ে গ্রামের ভিতর। মানুষ তখন ঘুমন্ত। কেউ কেউ ফজরের নামাজ পড়ার জন্য ঘুম থেকে উঠেছে। পাক-সেনারা প্রথমেই হিমায়েত মিনাকে গুলি করে। এ সময় তিনি গুরুত্বর অবস্তায় ‘জয় বাংলা’ বলে চিৎকার দেয়। যতবার সে জয় বাংলা বলেছে ততবার পাক-সেনারা তাকে গুলি করেছে। পরে আব্দুর রজ্জাক নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে।
এছাড়াও বানছারাম মন্ডলকে গুলি করতে উদ্দ্যোগ নিলে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে বেঁচে যান, বজলার রহমান, আঃ জলিল, হারুন শেখসহ অনেকে। এতে ইতনা হয়ে পড়ে ভুতুড়ে গ্রাম। লাশ আর লাশ। দাফন করার মত মানুষ নেই। গ্রামবাসীরা ধর্মীয় সকল নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে কোন মতে শহীদদের দাফন করে গ্রাম ছাড়া হয়। এ আতঙ্ক সবার মধ্যে। ওইদিন কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ গ্রামবাসীকে পাক-সেনারা হত্যা করে।
এদিকে বিষাদময় সেইদিনের কথা মনে করে এ অঞ্চলের মানুষ আজও আঁতকে ওঠেন। চোখের জলে বুক ভাসান স্বজনরা। এ বছরও ইতনা স্কুল অ্যান্ড কলেজের পক্ষ থেকে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে শহীদদের স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, বিকেলে আলেচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।