বরগুনায় শনিবার (২৫ মে) বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে শুরু হয়েছে ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাস। এর আগে ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে বরগুনার জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, মধ্যরাত বা তার কিছু সময় পর মহাবিপদ সংকেত দেখানো হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে রয়েছে বরগুনার দুই কিলোমিটার ঝূঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ এলাকার বাসিন্দারা। তারা বলছেন, হঠাৎ করে আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে। এদিকে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের সচেতন করতে কোস্ট গার্ড মাইকিং শুরু করেছে।
বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে নাম পাবে রেমাল। এটি ওমানের দেওয়া। যার নাম বালু।
শনিবার (২৫ মে) দুপুর ১২টার দিকে পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে নিম্নচাপটি ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ও কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল হতে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। উপকূলীয় এলাকা দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। পটুয়াখালীর পায়রা, চট্রগ্রাম, কক্সবাজার ও মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। সব মাছধরা ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
শনিবার (২৫ মে) বিকালে তালতলী উপজেলার তেতুলবাড়িয়া এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, বঙ্গোপসাগর ও পায়রা নদীর মোহনার তীরবর্তী এই এলাকার বেড়িবাঁধ ঝূঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। জোয়ারের পানির স্বাভাবিকের থেকে বাড়লেই তলিয়ে যাবে গোটা এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দা মোতালেব মিয়া বলেন, পাকিস্তান আমলে নির্মাণ করা এই বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে অন্তত ২০ বছর আগে। সিডর, আইলা, মহাসেনসহ বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড়ে এই বাঁধ ভেঙে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এই বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ থাকার কারণে পুরো নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন এখন ঝূঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে যদি জলোচ্ছ্বাস হয়, তবে ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে এখানকার বাসিন্দাদের।
তেতুলবাড়িয়ার পাশের গ্রাম জয়ালভাংগা। জয়াল ভাংগার বেড়িবাঁধের একই অবস্থা। এই এলাকার ৬৩ বছরের বৃদ্ধ আবুল কালাম বলেন, মাছ শিকার করার কারণে নদীর তীরে বসবাস শুরু করেন তার পূর্ব পুরুষেরা। সেই থেকেই এই বাঁধ বার বার ভাঙে, আর বার বার জরুরি মেরামত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন আতঙ্কে আছি। মহাবিপদ সংকেত দিলে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা পাব না। কারণ এখানে আশ্রয়প্রার্থীদের তুলনায় আশ্রয়কেন্দ্র অনেক কম।
একই অবস্থা বরগুনা সদর উপজেলার বালিয়াতলী, নলটোনা; বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ী ও পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘার ঝূঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের।
সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সফিকুজ্জামান মাহফুজ রাইজিংবিডি-কে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের দুটি গ্রাম ঝূঁকিপূর্ণ। আমি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করিয়েছি নলী ও আজগরকাঠি এলাকায়। মানুষ আতঙ্কিত। তবে ঘরবাড়ী ও বসতভিটা ফেলে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চায় না।’
প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এর আগের সংসদ সদস্যের কাছে একটা ডিও লেটারের জন্য ঘুরেছি। স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের জন্য তার সহায়তা চেয়েছি। কিন্তু তিনি সেসব কিছুই করেননি। তাই এই এলাকা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আশ্বাস দিয়েছেন।’
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব রাইজিংবিডি-কে বলেন, ‘ছয় উপজেলার পাঁচটি পয়েন্ট ঝুঁকি আছে। আমরা কিছু জিও ব্যাগ প্রস্তুত করে রেখেছি।’
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত আনোয়ারা তুমপা রাইজিংবিডি-কে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতিসভা করেছি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতন করতে কাজ শুরু করেছে।’
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডি-কে বলেন, বরগুনায় ৬৭৩টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৩টি মুজিব কেল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে ৩ লাখ ২১ হাজার ২৪৪ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। দুর্যোগ পরবর্তীতে খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য জেলায় ৪২২ মেট্রিক টন জি আর চাল মজুত আছে। শুকনো খাবার আছে ২৩৩ প্যাকেট। এছাড়াও ২৩৩ বান্ডিল ঢেউটিন রয়েছে। নগদ অর্থ আছে ৮ লাখ টাকা। সর্বোচ্চটুকু দিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় চেষ্টা করবেন।