হিমাগার মালিকদের বৈষম্যমূলক একতরফা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদে গণঅনশন কর্মসূচিতে নেমেছে রংপুরের আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা। রোববার (২৬ মে) রংপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে জেলা ও বিভাগীয় আলু চাষি ব্যবসায়ী সংগঠনের ব্যানারে দিনব্যাপি অনশন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে বিভাগের আট জেলার শতাধিক আলু চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা অংশ নেন। নেতৃত্ব দেন রংপুর জেলা আলু চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতি সভাপতি তৈয়বুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ বনিক।
রংপুর জেলা আলু চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তৈয়বুর রহমান বলেন, সিন্ডিকেট করে রংপুরের হিমাগারগুলোতে হঠাৎ আলু রাখার ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর এক লাফে বস্তা প্রতি ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। যা আলু ব্যবসায়ী ও চাষিদের জন্য অমানবিক। হিমাগার মালিকদের সিন্ডিকেট ভেঙে তাদের লাগাম টেনে ধরে বাজার পর্যায়ে আলুর বাজার স্বাভাবিক রাখা ও হিমাগারে চাষিদের বস্তা প্রতি ভাড়া কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
রংপুর জেলা আলু চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতি সম্পাদক বিশ্বজিৎ বনিক বলেন, বিদ্যুৎ বিলের অযৌক্তিক অযুহাতে রংপুর জেলার ৪০টি হিমাগারে অন্যায়ভাবে আলু রাখার ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেখানে দেশের অন্যান্য জেলায় হিমাগারে ৬০ কেজি ওজনের আলুর বস্তা প্রতি ভাড়া ১৮০ টাকা থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হলেও রংপুর অঞ্চলে নেওয়া হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৩৮৫ টাকা করে। ভাড়া কমানো না হলে হিমাগার থেকে আলু বের করা বন্ধ করে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
এদিকে, ব্যবসায়ী ও চাষিদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে সপ্তাহের ব্যবধানে রংপুরের সিটি বাজারসহ অন্যান্য বাজারে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে আলুর দাম। ক্রেতারা বলছেন, গত বছর এই সময় কার্ডিনাল আলুর দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা, অথচ এখন ভরা মৌসুমে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। আর দেশি আলু ৫০ থেকে ৫৫ টাকার পরিবর্তে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। এমন ঊর্ধ্বমুখী বাজারে দাম রেকর্ড ভঙ্গ হওয়ার শঙ্কায় ক্রেতা সাধারণের।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এ বছর ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩৫৪ মেট্রিক টন। এর মধ্যে শুধু রংপুর জেলার ৪০টি হিমাগারে ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিকটন আলু মজুত রয়েছে।
তবে হিমাগারের ভাড়া বস্তা প্রতি একশত টাকার অধিক বৃদ্ধির বিষয়ে রংপুর জেলা হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর বিদ্যুৎ বিলসহ আনুষঙ্গিক খরচ অনেক বেড়েছে। যার ফলে ভাড়া কিছুটা বর্ধিত করা হয়েছে। এতে চাষি ও ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক আন্দোলনে বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না হলেও দাবি তার। তবে হিমাগার ভাড়া কমানোর বিষয়ে চাষি ও ব্যবসায়ীরা এখন পর্যন্ত হিমাগার মালিক সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করেনি বলেও জানান ব্যবসায়ী সমিতির এই নেতা।
হিমাগার ভাড়া কমানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিহিত করা হয়েছে বলে জানান রংপুর জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান। এ সময় হিমাগার মালিক, চাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয় করে আলুর দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।