সারা বাংলা

ঘূর্ণিঝড় রেমাল: খুলনায় স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত করলেন এলাকাবাসী

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে খুলনার দাকোপ উপজেলার পাঁচটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে নোনা পানি। এর মধ্যে অন্তত চারটি স্থানে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁধ সংস্কার করে নোনা পানির প্রবেশ ঠেকিছেন এলাকাবাসী। শুধু একটি জায়গার বাঁধ মেরামত করতে পারেননি তারা। এলাকাবাসী জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধগুলো মজবুত করা না হলে আগামীতে বিপদে পড়তে হতে পারে তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাকোপের কাজীবাছা নদীর খলিশা ও পানখালী নদীর বাঁধের ভাঙন ঠেকিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। উপজেলার বটবুনিয়া বাজার-সংলগ্ন ঢাকী নদীর ভাঙন দেখা দেওয়া দুই জায়গার বাঁধও নিজেদের শ্রমে মেরামত করেছিলেন সেখানকার বাসিন্দারা। কিন্তু, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জোয়ারে ঢাকী নদীর বাঁধের একটি জায়গা আবারও ভেঙে যায়। পরে দুপুর পর্যন্ত কাজ করে সেই স্থান মেরামত করে নোনা পানির প্রবেশ ঠেকান এলাকাবাসী।

ভাঙন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নোনা পানি আটকানোর চেষ্টায় কাজ করছিলেন শত শত মানুষ। কেউ কোদাল দিয়ে মাটি কাটছেন। সেই মাটি লম্বা সারি করে দাঁড়িয়ে একজন আরেকজনের হাতে দিচ্ছিলন। বাঁধের কাছে দাঁড়ানো কিছু মানুষ সেই মাটি দিয়ে বাঁধ মেরামতের কাজ করছিলেন। পুরুষের সঙ্গে সমানতালে নারীদেরও কাজ করতে দেখা যায়। 

স্বেচ্ছাশ্রমে শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করছিলেন তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সঞ্জয় সরদার। কাজের ফাঁকে তিনি বলেন, ‘প্রায় ৭০০ লোক স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন। গত সোমবার সবাই মিলে শ্রম দিয়ে নোনাপানির প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু, মঙ্গলবার দুপুরের জোয়ারে ভেঙে যাওয়া দু’টি জায়গার মধ্যে একটি আবারও ভেঙে যায়। সোমবার বিনা মূল্যে শ্রম দিয়েছেন এলাকাবাসী। মঙ্গলবার ঘণ্টায় ৭০ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান।’

মজুরি কিংবা টাকা-পয়সা নিয়ে ভাবছেন না এলাকাবাসী। স্বেচ্ছাশ্রম দিতে আসা অসিত সরদার ও শশাঙ্ক রায় জানান, টাকা নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই। তারা চান, এলাকায় যাতে দ্রুত লবণ পানির প্রবেশ বন্ধ হয়। দ্রুত পানি আটকানো না গেলে জোয়ারের সময় ভাঙনের জায়গা বড় হয়ে গেলে আর পানি আটকানোর মতো অবস্থা থাকে না।

সাময়িকভাবে পানি আটকানো সম্ভব হলেও আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাঁধটি মজবুত করে সংস্কার না করলে আবারও ভাঙন দেখা দেবে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন বাসিন্দা।

সুশান্ত সরদার নামের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘এখন পানির চাপ কম থাকবে। তবে ছয়-সাত দিন পর জোয়ারের চাপ বাড়বে। এই সময়ের মধ্যে বাঁধ মজবুত না করলে আবার সমস্যা হবে।’

বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় ক্ষতিগ্রস্ত দোকানি গোপাল বিশ্বাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, ‘দীর্ঘদিন এখানে রাস্তার খারাপ অবস্থা ছিল। একটা প্রকল্পের কাজ চলছে। কিন্তু, ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ করে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কোনো দিন খেয়ালও করে না, আদৌ কোনো কাজ হচ্ছে কি না।’

পাউবো সূত্র জানায়, ৩১ নম্বর পোল্ডারে জাইকার অর্থায়নে একটি প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ৭৫০ মিটার স্থায়ী নদী শাসনের কাজ চলছে। বটবুনিয়া বাজার ও কামিনিবাসিয়ায় ভাঙন এলাকায় যথাক্রমে ৫০০ মিটার ও আড়াই হাজার মিটার জায়গা নদী শাসনের কাজ চলমান। এর মধ্যে দু’টি জায়গার তিনটি পয়েন্টে ভেঙেছে।

খুলনা পওর বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, দাকোপের খলিশা, পানখালী, বটবুনিয়ার দু’টি পয়েন্ট ও কামিনিবাসিয়া; পাইকগাছার তেলিখালী ও কয়রার দশালিয়ায় ভেড়িবাঁধ ভেঙে বিলীন হয়েছে। এই সাত জায়গায় ১৫০ মিটারের মতো বাঁধ ভেঙেছে। এ ছাড়া দাকোপ, বটিয়াঘাটা, কয়রা ও পাইকগাছায় আরও ৬০টি পয়েন্টে পানি উপচে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে চার উপজেলায় ৬২৩ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধের মধ্যে ১০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দাকোপের কামিনিবাসিয়া, পাইকগাছার তেলিখালী ও কয়রার দশালিয়া তিন জায়গায় ভাঙন আটকানো এখনো সম্ভব হয়নি। অন্য জায়গা দিয়ে আর পানি ঢুকতে পারছে না। দ্রুত ওই তিন জায়গা সংস্কারের প্রক্রিয়া চলছে। 

পাউবোর সহায়তার ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, জিও ব্যাগ, সিনথেটিক ব্যাগ, বাঁশ, কাঠ দিয়ে জনগণের সহায়তায় বাঁধের সংস্কার চলছে।