নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর্দা উঠতে আর কিছুদিনের অপেক্ষা। প্রথমবারের মতো ২০ দলের অংশগ্রহণে টি-টোয়েন্টির মহাযজ্ঞ হবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজে। র্যাংকিংয়ে শুরুর দিকে থাকায় সরাসরি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। ফরম্যাটের কারণে এবার নেই বাছাইপর্ব। সরাসরি ২০ দল খেলবে মূল আসরে।
আগের আট আসরে বাংলাদেশের রেকর্ড বেশ বিবর্ণ। ৩৮ ম্যাচে জয় মাত্র ৯টি। যার ৬টিই বাছাইপর্বে। মূলপর্বে কেবল ৩টি। মনে করিয়ে দেওয়া ভালো- হংকং, আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তানের মতো প্রতিপক্ষের কাছে হারের লজ্জাও পেয়েছে। একাধিক বড় দলকে হারানোর সুযোগ পেয়েও পারেনি বাংলাদেশ। এবার বাংলাদেশ কেমন করবে সেটাই বিরাট প্রশ্ন।
অস্ট্রেলিয়াতে বসেছিল সবশেষ বিশ্বকাপ। দুই বিশ্বকাপের মাঝে কেমন ছিল বাংলাদেশের পারফরম্যান্স? যদি পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হয় তাহলে পাশ মার্ক পেরিয়ে ভালো অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ। তবে যদি অনেক সমীকরণ টানা হয় এবং সাম্প্রতিক সাফল্যর কথা বলা হয় তাহলে পিছিয়ে পড়বে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। দুই বিশ্বকাপের মাঝে বাংলাদেশ ২৫ টি-টোয়েন্টি খেলেছে। যেখানে ১৬টি ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ। হেরেছে ৮টি ম্যাচ। ফল আসেনি ১টি ম্যাচে। জয়ের সংখ্যা হিসেব করলে বেশ আত্মবিশ্বাস পাওয়ার কথা বাংলাদেশের।
কিন্তু বিশ্বকাপে ঠিক যাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হার সবকিছুই ওলট-পালট করে দিয়েছে। নিজেদের আয়নাতেও কঠিন পরিস্থিতিতে ক্রিকেটাররা। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে আতিথেয়তা দিয়েছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। জস বাটলারের নেতৃত্বে ইংল্যান্ড পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই এসেছিল বাংলাদেশে। কিন্তু বিশ্বকাপের পর প্রথম সিরিজেই তারা হোয়াইটওয়াশ। অভাবনীয় পারফরম্যান্সে সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জিতে নেয় সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে।
এরপর আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রত্যাশিত সাফল্য পায় বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জিতে যায় সিরিজ। মাঝে জাতীয় দলের ছায়া দল বা ‘এ’ দল গিয়েছিল এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণ করতে। সেখানে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে জিতলেও ভারতের কাছে হেরে ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় এবং তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ পদক পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
সাকিবের ব্যস্ততা ও ভবিষ্যৎ ভাবনায় বিসিবি এরপর তিন ফরম্যাটেই আনে অধিনায়কত্বে পরিবর্তন। নতুন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে শুরু হয় পথচলা। শুরুটা খারাপ হয়নি। নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে তাদেরকে হারায় বাংলাদেশ। নেপিয়ারে ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতলেও মাউন্ট মঙ্গানুইতে ১৭ রানে ম্যাচ হেরে যায়। মাঝে বৃষ্টিতে একটি ম্যাচ পণ্ড হয়। সিরিজে ১-১ এ সমতা।
এরপর হঠাৎ ঘরের মাঠে হোঁচট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ সিরিজ হেরে যায় ২-১ ব্যবধানে। বিশ্বকাপের তিন মাস আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ হারের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হন ক্রিকেটাররা। অবশ্য এই হার থেকে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা বারবারই দল থেকে দেওয়া হয়েছে। বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। সিরিজে জয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্রিকেটারকে ঝালিয়ে নেওয়া হয়। তাতে মনে হচ্ছিল দলটা থিতু হয়ে বিশ্বকাপ মঞ্চে যাচ্ছে।
কিন্তু হিউস্টনে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে যেভাবে পারফরম্যান্স করেছে, যেভাবে ম্যাচ হেরেছে তাতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে তাদের সামর্থ্য, নিবেদন। হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচে বাংলাদেশ দাপুটে জয় পেলেও র্যাংকিংয়ে দশ ধাপ পিছিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে ম্যাচ হারায় সমালোচনায় জর্জরিত হচ্ছেন সাকিব, শান্ত, মোস্তাফিজরা। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের গ্রুপে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেপাল ও নেদারল্যান্ডস। শুরুর দুইটি ম্যাচই শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এই দুই ম্যাচেই নির্ভর করবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ভাগ্য।
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের পর শুরুর এক বছরে দল যে অবস্থানে ছিল এখন সেই অবস্থানে নেই। অনেকটাই আনসেটেল। খেলোয়াড়রা ফর্মে নেই। সঠিক জায়গা থেকে আসছে না পারফরম্যান্স। তাতে দোদুল্যমান দলের ছন্দ। এমন অবস্থায় বিশ্বকাপে উচ্চমানের পারফরম্যান্সের চিন্তা করা অনেকটাই কঠিন। তবুও আশায় বুক বাঁধা। শান্তর নেতৃত্বে দল কেমন করে সেটাই দেখার।