সারা বাংলা

বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে সিলেটের ৪ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেট জেলার চারটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কয়েকটি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকার মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছেন 

এদিকে, জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা জৈন্তাপুরে সারি গোয়াইন ওয়াপদা বেড়িবাঁধ প্রকল্পের চারটি অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে ঢল নেমে উপজেলা সদরের বাসা বাড়িতে পানি উঠেছে। বুধবার (২৯ মে) রাত ১০টা পর্যন্ত প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করছিল ওই এলাকায়। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করতে বিজিবিসহ রাজনৈতিক কমীর্রা মাঠে রয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলার হাওর ও নিম্নাঞ্চল এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে। উপজেলাগুলোর কয়েকটি রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছেন। মানুষদের জন্য কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৩৫টি, গোয়াইনঘাটে ৫৬টি, জৈন্তাপরে ৪৮টি ও কানাইঘাটে ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। হাওরাঞ্চলের বাড়িঘরের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গোয়াইনঘাট উপজেলার সারিঘাট-গোয়াইনঘাট, গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং ও সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক প্লাবিত হওয়াতে রাস্তা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাকি উপজেলাগুলোতেও রাস্তার ধার দিয়ে পানি প্লাবিত হচ্ছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া সহকারী শ্রী নিবাস দেবনাথ বলেন, বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিলেটে ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। আজ বুধবার রাতেও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট অফিস জানায়, বুধবার সিলেটের ৫টি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করে ১৩.৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যেখানের বিপৎসীমা ১২.৭৫ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারার অমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৫.৪০ সেন্টিমিটার হলেও সন্ধ্যায় ১৬.৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সারি নদীর বিপৎসীমা ১২.৪৫ সেন্টিমিটার হলেও সন্ধ্যায় সারিঘাট পয়েন্টে এই নদীর পানি ১৩.২৬ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। ডাউকির বিপৎসীমা ১৩ সেন্টিমিটার। আজ সন্ধ্যায় জাফলং পয়েন্টে ১৩.৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ও সারি-গোয়াইনের গোয়াইনঘাট পয়েন্টের বিপৎসীমা ১০.৮২ হলেও ১০.৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত বাড়ার কারণে সিলেটের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। চারটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। নিম্নাঞ্চলের পানি কিছুটা কমেও যাচ্ছে। আশা করা যায়, এভাবে পানি নামলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। তবে সময় লাগবে পরিস্থিতির উন্নতি হতে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ১৩টির মধ্যে ১২টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছেন। আমরা খোঁজ নিচ্ছি এবং মাঠে আছি।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মানুষজনের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা মাইকিংও করেছি। কারো আশ্রকেন্দ্রে আসতে অসুবিধা হলে আমাদের ভলান্টিয়াররা গিয়ে আনবেন।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, অনেক অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নিজপাট ইউনিয়নের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ইতিমধ্যে মানুষ আসতে শুরু করেছেন। পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আজকের রাত গেলে পরিস্থিতি বোঝা যাবে।

কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরীন বলেন, বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা সব জায়গায় খবর রাখছি।