বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ৪৫ বছর ধরে সারাদেশে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য নানারকম উৎকর্ষ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। দেশভিত্তিক এই কার্যক্রমের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি হচ্ছে ‘বইপড়া’। বর্তমানে সারাদেশে এই কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১ হাজার ৭০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২ লাখ শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। বইপড়াকে উৎসাহিত করার জন্য ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে বিপুলসংখ্যক পুরস্কারের ব্যবস্থা।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সূত্র জানায়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে খুলনা মহানগরীর ৪৯টি স্কুলের প্রায় ৫ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী বইপড়া কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। এসব স্কুলের ৩ হাজার ১২৬ জন শিক্ষার্থী মূল্যায়নপর্বে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তাদের পুরস্কার দিতে শুক্রবার (৩১ মে) খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ২ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থী সরাসরি মঞ্চ থেকে পুরস্কার নেন। ৮৯০ জন শিক্ষার্থীর পক্ষে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষক পুরস্কার নেন।
দিনব্যাপী পুরস্কার বিতরণ উৎসবে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. আবদুস সামাদ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. আবদুন নূর তুষার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অলোক কুমার মৈত্র, গ্রামীণফোনের খুলনা রিজিওনাল হেড বুশরা মেহরিন এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন।
এছাড়াও বিভিন্ন পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন, খুলনা জেলা শিক্ষা অফিসার ফারহানা নাজ, খুলনা পিটিআইয়ের সুপারিনটেনডেন্ট মোল্যা ফরিদ আহম্মেদ এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হুমায়ুন কবির ববি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক (প্রোগ্রাম) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন।
ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের স্বাগত, শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও সেরাপাঠক শিরোনামের চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয়। শুক্রবার ৪৯টি স্কুলের ৩ হাজার ১২৬ জন ছাত্রছাত্রীকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এরমধ্যে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে স্বাগত পুরস্কার পেয়েছেন ৫৭৯ জন, শুভেচ্ছা পুরস্কার পেয়েছেন ৮০৩ জন, অভিনন্দন পুরস্কার পেয়েছেন ১ হাজার ৬৩০ জন এবং সেরাপাঠক পুরস্কার পেয়েছেন ১১৪ জন। বিজয়ী ২ হাজার ২৩৬ জন।
কর্মসূচির নিয়মানুসারে সেরাপাঠক বিজয়ীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে প্রতি ১০ জনে একটি বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিশেষ পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় ১০টি মূল্যবান বইয়ের একটি করে সেট।
এর আগে, আজ সকালে সরকারি ইকবাল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জাতীয় সংগীত পরিবশনের মাধ্যমে পুরস্কার বিতরণ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পরপর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন স্বাগত বক্তব্যে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অতিথিদের অভিনন্দন জানান।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ বলেন, আমাদের সবাইকে বই পড়তে হবে। বই আমাদের স্বপ্ন দেখতে শেখায়। একটা জিনিসকে নানা আঙ্গিকে দেখার জন্য বই পড়তে হবে। বই পড়ার মাধ্যমে জীবনকে এগিয়ে নিতে হবে।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. আবদুস সামাদ বলেন, পাঠ্য বইয়ের বাইরে সাহিত্যর বইগুলো সবসময় জীবনের জন্য প্রয়োজন। আমরা সবাই এই জীবন পাঠশালার ছাত্র-ছাত্রী মাত্র। বিশ্ব নাগরিক হবার জন্য বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ডা. আবদুন নূর তুষার ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা কি জানো, তোমাদের মতো লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এই বইপড়া কর্মসূচির সঙ্গে সংযুক্ত। একটা ভালো কাজের সঙ্গে সব মানুষকে যুক্ত থাকতে হয়।
গ্রামীণফোনের খুলনা রিজিওনাল হেড বুশরা মেহরিন শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, একজন পাঠক এক হাজার বছর জীবন অতিবাহিত করেন। যারা বই পড়ে না, তারা একটি জীবন অতিবাহিত করে। তাই বই অবশ্যই বই পড়তে হবে।