সাতসতেরো

ক্রিকেটে শূন্যকে কেন ‘ডাক’ বলা হয়?

শুরু হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ-২০২৪। চলতি আসরে চার-ছক্কার উল্লাস যেমন থাকবে, পাশাপাশি শূন্য রানে ব্যাটসম্যানের আউট হওয়ার যন্ত্রণাও থাকছে। ক্রিকেট দুনিয়ায় শূন্য রানে আউট হওয়াকে ‘ডাক’ বলা হয়। কিন্তু কেন বলা হয়? আসুন জেনে নেই। 

ক্রিকেট খেলার সাথে ‘ডাক’ শব্দটি যুক্ত করার পেছনে ভূমিকা রয়েছে একটি পত্রিকার। যদিও ডাক বলতে আমরা বুঝে থাকি হাঁস। 

১৮৬৬ সালের একটি ক্রিকেট ম্যাচের খবর করতে গিয়ে একটি সংবাদমাধ্যম ব্যবহার করে এই ‘ডাক’ শব্দটি। সেই ম্যচে শূন্য রানে আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরেন সপ্তম এডওয়ার্ড। খবরের শিরোনাম ছিলো, প্রিন্স অব ওয়েলস ভবিষ্যৎ রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড একটি হাসের ডিম নিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন। প্রিন্স অব ওয়েলস’ই পরবর্তীকালে পরিচিত হন রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড নামে।

৮০-এর দশকে যারা টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখতেন তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে কোনো ব্যাটসম্যান শূন্য রানে আউট হলে স্ক্রিনে দেখা যেতো একটি হাসের কার্টুন ব্যাট হাতে নিয়ে মাথা নিঁচু করে কান্না করতে করতে মাঠ ছাড়ছে এবং ব্যাটসম্যানের রানের পাশে লেখা দেখাতো ‘ডাক’।

অস্ট্রেলিয়ার কেরি প্যাকার ১৯৭৭ সালে ব্যাটসম্যানদের মন খারাপের সঙ্গে জুড়ে দেয় হাসের এই অ্যানিমেশন। যার নাম ছিলো ড্যাডলস।

ক্রিকেটে নানা ধরনের ‘ডাক’ প্রচলিত আছে। কোনো ব্যাটসম্যান যদি দুই এক বল খেলে শূন্য রানে আউট হয় তাহলে সেটিকে ‘ডাক’ বলা হয়। আবার কোনো ব্যাটসম্যান ব্যাট করতে নেমেই যদি প্রথম বলে আউট হয় তবে সেটিকে বলা হয় ‘গোল্ডেন ডাক’। যদি কোন ব্যাটসম্যান কোন বল না খেলেই আউট হয়ে যায় তবে তাকে ‘ডায়মন্ড ডাক’ বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, স্ট্রাইক ব্যাটসম্যান মাঠে নেমেই রান নিতে গিয়ে আউট হলে সেটাকে ডায়মন্ড ডাক বলে। একজন ব্যাটসম্যান যদি ম্যাচের প্রথম বলেই আউট হয় তাকে ‘প্লাটিনাম ডাক’ বলা হয়।

ভারতীয় ব্যাটসম্যান অজিত আগারকার অস্ট্রেলিয়ার সাথে পরপর ৫টি ডাক মারায় তার আউটগুলোকে বলা হয় ‘বোম্বে ডাক’। জানিয়ে রাখা ভালো, টেস্টের দুই ইনিংসেই যদি কোন ব্যাটসম্যান শূন্য রানে আউট হয় তাকে ‘পেয়ার’ বলা হয়। আবার যদি কোন ব্যাটসম্যান দুই ইনিংসেই প্রথম বলে আউট হয় তাকে ‘গোল্ডেন পেয়ার’ বলা হয়।

সবচেয়ে বেশিবার শূন্য রানে আউট হওয়ার দখল শ্রীলঙ্কার বিখ্যাত স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরনের। তিনি শূন্য রানে আউট হয়েছেন ৫৯ বার। এরপরের স্থানেই আছেন বাংলাদেশ সাবেক কোচ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ক্রিকেটার কোর্টনি ওয়ালশ। যার ডাকের সংখ্যা ৫৪টি। শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়াসুরিয়া শূন্য রানে আউট হয়েছেন ৫৩ বার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান নেড গ্রেগরি। ১৮৭৭ সালে মেলবোর্নে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচে আউট হন তিনি। বোলার ছিলেন ইংল্যান্ডের জেমস লিলিহোয়াইট।

ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান স্যার ডোনাল্ড জর্জ ব্র্যাডম্যানের নামের সাথে জড়িয়ে আছে সবচেয়ে কষ্টের ডাকটি। ‘দ্যা ডন’ হিসেবে পরিচিত এই ব্যাটসম্যান জীবনের শেষ ম্যাচে আউট হন শূন্য রানে। সেই ম্যাচে শূন্য রানে আউট না হলে তার ব্যাটিং গড় থাকতো একশো। দুভার্গ্যবশত সেই আউটের ফলে গড় হয় ৯৯.৯৪।