প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির কোনো খবর নেই। তাদের হাহাকার আরও বাড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
শুক্রবার (৭ জুন) বাজেট নিয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাজেটের সমালোচনা করে সাইফুল হক বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বাজেট বাজারের আগুনে পুড়তে থাকা স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য কোনো সুখবর দিতে পারেনি। জীবনযাত্রার অসহনীয় ব্যয় কমাতে বাজেটে বিশ্বাসযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেই। বরং মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয় ও ক্রয়ক্ষমতা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ঋণের ভারে জর্জরিত এই বাজেট প্রস্তাবনা স্ববিরোধী ও বেসামাল। এই বাজেট জনকল্যাণের পরিবর্তে জীবন জীবিকায় জনদুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেবে। ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি পোষাতে ব্যাংক ব্যবস্থা আরও বেসামাল ও ঝুঁকির মধ্যে পডবে। আর এই ঘাটতির শেষ অভিঘাত এসে পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর।
সাইফুল হক মনে করেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার ওপর যাবে কেবল ঋণের সুদ পরিশোধেই। আর বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্রে আরও হাত বাড়ালে তারও ভুক্তভোগী হবে সাধারণ মানুষ।
তিনি বলেন, টাকার মূল্যমান অস্বাভাবিক কমিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক দাতাদের খুশি রেখেই এই বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কাঙ্খিত ঋণ ও বিনিয়োগ পাওয়া অনিশ্চিত।
তিনি উল্লেখ করেন, নতুন অর্থবছরের বাজেটে যে ১১টি বিশেষ অগ্রাধিকার উল্লেখ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করার দৃশ্যমান ও কার্যকরি পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে এই নেতা বলেন, লাগামহীন দুর্নীতি ও অর্থপাচার রোধ করতে বাজেটে কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ নেই। পুঁজিপাচারের মতো অর্থনীতির বড় সমস্যার সমাধান, হুন্ডি কমিয়ে আনার ব্যাপারেও বাজেটে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। বরং ব্যাংক ঋণের এক বড় অংশ পাচার হয়ে গেলেও বাজেটে এই নিয়ে তেমন কোনো কথা নেই।
‘দেশের একটি অর্থনৈতিক দুঃসময়ে যে ধরনের সমতাধর্মী আশাবাদের বাজেট দরকার ছিল তা বাজেট প্রস্তাবনায় অনুপস্থিত। খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য কমবে কিনা ও জীবনযাত্রার অসহনীয় ব্যয়ভার কমবে কিনা বাজেটে এরকম কোনো আশাবাদী প্রস্তাব নেই। মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে মানুষের প্রকৃত আয় বৃদ্ধি পাবে কিনা তারও কোনো নির্দেশনা নেই বলেও দাবি করেন সাইফুল হক।
তিনি বলেন, বাজেটে রাজস্ব ব্যয়সহ অনুৎপাদনশীল ব্যয় কমিয়ে আনার কোনো প্রস্তাবনা নেই। শিল্প, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক খাতগুলোতে এবারও বরাদ্দ অপ্রতুল। বিশেষ করে করের আওতা বৃদ্ধি করে ও বিত্তবানদের ওপর বর্ধিত কর আদায় করে রাজস্ব বৃদ্ধির দৃশ্যমান ও বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রস্তাবনা বাজেটে নেই।
শ্রমিকদের জন্য জাতীয় ন্যুনতম মজুরি কমিশন ঘোষণা ও মহার্ঘ ভাতা চালুর ব্যাপারেও বাজেটে কোনো প্রস্তাব নেই জানিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র জন্য নাগরিকদের ভোটের অধিকারসহ যে সক্ষমতা দরকার অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবনায় এই ব্যাপারেও কোনো আশাবাদ নেই। বরং এই বাজেট দারিদ্র্য ও নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়াকে পরোক্ষভাবে আরও জোরদার করবে এবং জনগণের দীর্ঘশ্বাস ও হাহাকার আরও প্রলম্বিত করবে।