সারা বাংলা

২১ দিনেও সন্ধান মেলেনি আদিবাসী ২ যুবকের, উৎকণ্ঠায় পরিবার

নিখোঁজের ২১ দিন পার হলেও এখনো সন্ধান মেলেনি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যংয়ের দুই আদিবাসী যুবকের। ভুক্তভোগী পরিবারের ধারণা, কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের অপহরণ করেছে। তাদের ফিরে পেতে শুক্রবার (৭ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টায় সংবাদ সম্মেলন করেছে আদিবাসী বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ।

নিখোঁজ যুবকরা হলেন- ছৈলা মং চাকমা (৩০) ও ক্যমংথো এ তঞ্চঙ্গ্যা (১৯)। 

সংবাদ সম্মেলনে সম্মেলনে নিখোঁজদের পরিবারের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের টেকনাফ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রভাত তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি বলেন, গত ১৬ মে সকাল ৭টার দিকে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের হাউস দ্বীপের পাশে ৫ নম্বর গেইটস্থ নাফ নদীতে কাঁকড়া শিকারে গিয়ে নিখোঁজ হন দুই যুবক। তারা জীবিত নাকি মৃত এ বিষয়ে কেউ নিশ্চিত নন। যে কারণে বর্তমানে এ দুই যুবকের পরিবারে কান্নার রোল পড়েছে। পরিবারের সদস্যদের ধারণা, কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদেরকে আটকে রেখেছে। তবে, এখনো মুক্তিপণের দাবি করা হয়নি। 

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা ঘটনার পরদিন টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিজিবি, র‍্যাবসহ সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এই বিষয়ে জানানো হয়েছে। দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি তাদের পক্ষ থেকে। ফলে দুটি পরিবারের উৎকণ্ঠা দিন দিন বাড়ছে। 

নিখোঁজ ছৈলামং চাকমার স্ত্রী চিনু মারমা কক্সবাজার প্রেসক্লাবে এই প্রতিবেদককে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‌‘২১ দিন হয়ে গেছে। আমার স্বামীর কোনো খোঁজ নেই। ছোট একটি শিশু নিয়ে আমি কোথাই যাব। শিশুটিকেও ঠিকমতো খাবার দিতে পারছি না। সারাক্ষণ কান্না করে করে।’ 

স্বামীকে কাছে ফিরে পেতে  প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

ছৈলামংয়ের মা চুছিংচা চাকমা বলেন, ‘আমার ছেলে প্রতিবন্ধী। শারীরিক অক্ষমতার মধ্যেও খুব কষ্ট করে কাঁকড়া শিকার করতে যায় সে। দুই-চারশো টাকা যা আয় হয়, এতেই সংসার চলে। এখন উপোস থাকার অবস্থা। পুলিশ, বিজিবি ও র‍্যাবসহ সবার দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। কেউ বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাই।’

পরিবারের চরম দুর্দিন যাচ্ছে এ কথা জানিয়ে নিখোঁজ ক্যামংথো এ তঞ্চঙ্গ্যার স্ত্রী ছিংমালা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘আমি কিছুই চাই না, আমার স্বামীকে ফেরত চাই। স্বামীর অনুপস্থিতিতে দুই সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)  মো. ওসমান গনি বলেন, ‘একদিন রাতে এসে একটা অভিযোগ দিয়ে গেছে। আর কেউ যোগাযোগ করেননি। যে কারণে অভিযোগের তেমন অগ্রগতি নেই। ভুক্তভোগী পরিবারের সমস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ থের, সাধারণ সম্পাদক শুভংকর বড়ুয়া, নিখোঁজ ছৈলা মং চাকমার মা চুছিংচা চাকমা, স্ত্রী চিনু চাকমা, ও ক্যমংথো এ তঞ্চঙ্গ্যা’র মা মাথাইন ছিং তঞ্চগ্যা, স্ত্রী ছিংমালা তঞ্চগ্যা, বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সহ-সভাপতি সুমন বড়ুয়া, অর্থ সম্পাদকরাজু বড়ুয়া,ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুনিত্য বড়ুয়া, সদর উপজেলা শাখার সভাপতি ভুলু বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদন উমংচিং রাখাইন, রামু শাখার সভাপতি রিটন বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক তুষিত বড়ুয়া, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক উপেল বড়ুয়া প্রমুখ।