খুলনার রূপসা ও ডুমুরিয়া উপজেলায় নির্বাচনী সহিংতায় গত তিন দিনে ৩৯ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৭ জন। শুক্রবার (৭ জুন) বিকেলে গুরুতর জখম হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১৯ জন। এর মধ্যে রূপসা উপজেলার জাবুসা, মৈশাঘুনি, বাঁধাল, জোয়ার গ্রামে অন্তত ১৫/২০টি বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে।
রূপসায় আহতরা সবাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী অধ্যক্ষ ফেরদৌস সরদারের পক্ষে মাঠে ছিলেন। তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। গত ৫ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম হাবিব বিজয়ী হন। তিনি ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে হামলা, বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ করেছেন আহতরা। অবশ্য এস এম হাবিবের অনুসারীরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
প্রতিদিন হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর চলমান থাকায় রক্তপাত এড়াতে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অধ্যক্ষ ফেরদৌস সরদার। শুক্রবার চিঠি দিয়ে হামলা ও ভাঙচুরের বিবরণ তুলে ধরে গ্রামগুলোতে পুলিশ মোতায়েন এবং হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। কিন্তু শুক্রবার রাত পর্যন্ত পুলিশের কোনো ভূমিকা দৃশ্যমান হয়নি।
শুক্রবার রাতে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, মাথা, পিঠে, হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছেন অনেকে। কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। আহতরা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
পরাজিত প্রার্থী ফেরদৌস সরদার জানান, ৫ জুন রাত থেকে হামলা, নির্যাতন ও বাড়ি ভাঙচুর শুরু হয়েছে। ওই রাতে ৫নং দেয়াড়া ওয়ার্ডের অগ্রদূত মাঠে শাওন ও শামীমকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। দুর্জনীমহল গ্রামে হুমাই শেখ ও মনিরুল শেখ, সামন্তসেনা গ্রামে হোসেন আলী, হাবিব শেখ, আব্দুল মজিদ ফকির, মোকছেদ আলী ফকির ও সালাউদ্দিন পিন্টুকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আইচগাতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবুলের গ্রামের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে।
এ ব্যাপারে এস এম হাবিবের বক্তব্য জানা যায়নি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ। তার প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ ফ ম সালামের মোবাইলও বন্ধ রয়েছে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এনামুল হক জানান, নির্বাচন পরবর্তী সহিংতার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। বাকিগুলো ছোটখাটো ঘটনা। চড়-থাপ্পর খেয়েও অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
অপরদিকে, ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের শেষ দিনের প্রচারণায় এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মোটরসাইকেল বহরে পুলিশের সামনে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর। এতে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। এসময় ৩টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। শুক্রবার (৭ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার শাহপুর বাজারের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন গত ২৯ মে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানায় সেই ৯ জুন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
আহতদের ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা রয়েছেন। আহতরা হলেন, গজেন্দ্রপুর এলাকার হৈমন্ত চন্দ্র মন্ডলের ছেলে অসিত মন্ডল, একই এলাকার রাজেন্দ্র নাথ মন্ডলের ছেলে স্বপন কুমার মন্ডল, কালিপদ মন্ডলের ছেলে উৎপল মন্ডল, আমভিটা গ্রামের দেলওয়ার তালুকদারের ছেলে মিলন তরফদার।
আহত অসিত মন্ডল বলেন, ‘আমরা নিয়মিত কর্মসূচিতে অংশ হিসেবে মটরসাইকেলে করে যাওয়ার পথে গাজী এজাজের লোকজন আমাদেরকে শাহপুর এলাকায় ধাওয়া করে হামলা করে। এসময় হামলাকারীরা হকস্টিক, লাঠি ও স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটানো শুরু করে। আমাদের প্রায় ১০ থেকে ১২ জন বা তারও বেশি আহত হয়েছেন।’
মোটরসাইকেল মার্কার প্রার্থী আজগর বিশ্বাস তারা বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের দাবি প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠু, শান্ত ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন উপহার দিক।’
তিনি হামলার ঘটনায় এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘তাদের যদি হামলা করতেই হয়, আমার ওপর করত। কেন আমার কর্মীদের ওপর নগ্ন হামলা?’ তিনি অনতিবিলম্বে এ হামলার ঘটনায় বিচার দাবি করেন।
এ ঘটনায় ঘোড়া মার্কার প্রার্থী গাজী এজাজ আহমেদ বলেন, ‘আমরা কারও উপর হামলা করিনি। উল্টো আমাদের উপরে হামলা হয়েছে। আমাদের কয়েকজন আহত হয়েছে।’ তবে কয় জন আহত হয়েছে তা বলতে পারেননি তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, যেকোনো অপ-তৎপরতার বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন সর্বদাই সক্রিয়। শাহপুরের ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।