ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে ঢাকাবাসীকে এডিস মশার প্রজনন স্থল সম্পর্কিত এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনদেরকে রোগীর সঠিক ও যথাযথ তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। প্রয়োজনীয় তথ্য দিলে ১৫ মিনিটে সংশ্লিষ্ট সেবা দিতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে বলে তিনি জানান।
সোমবার (১০ জুন) সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকার ‘সব সরকারি হাসপাতালে বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন’ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র বলেন, এডিস মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস ও ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে আমাদের মশককর্মী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিয়ে আমরা যৌথ অভিযান পরিচালনা করছি। আমরা যেমন পরিষ্কার করে দেব তেমনি মশার লার্ভাও ধ্বংস করব। লার্ভা ধ্বংস করার মাধ্যমেই কিন্তু আমরা এডিস মশার বিস্তার পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। সেজন্য আমি সবাইকে আহ্বান করব, আপনারা আমাদেরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। তথ্য পাওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি।
তাপস বলেন, মশক নিধনে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ কাজ মাঠ পর্যায়ে আমাদের পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন কীটনাশক, সরঞ্জামাদি ও জনবল রয়েছে। কিন্তু বাড়ির আঙ্গিনা, ছাদ ও চারপাশে যদি মশার প্রজননস্থল সৃষ্টি হয় সে সম্পর্কিত তথ্য আমাদের সরবরাহ করার নিবেদন রইলো। আমরা যত বেশি তথ্য পাবো মাঠ পর্যায়ে আমাদের কার্যক্রম আরও বেশি কার্যকর হবে। আমরা মশক নিধন কার্যক্রম আরও বেশি ফলপ্রসূ করতে পারব। আজ উপস্থিত সাংবাদিক ভাই-বোনেরা আপনারা দেখেছেন, এখানে অভ্যন্তরীণ যে নর্দমা রয়েছে তাতে পানি প্রবাহ না থাকার কারণে পানি জমে আছে। এতে এডিস মশার উৎস তৈরি হয়। আবার সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো পরিত্যক্ত মালামালও রেখে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেও কিন্তু উৎস সৃষ্টি হয়। তাই সবাইকে ‘নিয়মিত প্রতিদিন জমা পানি ফেলে দিন’ এই প্রতিপাদ্য মানার অনুরোধ করছি।
এ সময় ডেঙ্গু রোগীর অপর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মন্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, সিটি করপোরেশন তার দায়িত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল এবং মাঠ পর্যায়ে তা যথাযথভাবেই পরিপালন করছে। আপনারা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে দেখুন। অনেক দেশেই আমাদের চাইতে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি, কিন্তু মৃত্যু হার অনেক কম। আমরা প্রতিরোধ পর্যায়ে কাজ করি। কিন্তু ডেঙ্গু রোগীর সঠিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। কোন রোগীর যদি যথাযথ ও নিয়মমাফিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার পরও কারো অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হয়, তাহলে জনগণ সেটা বিবেচনা করেন। সেবা পেয়েছেন বলে উপলব্ধি করেন। কিন্তু গাফিলতি, অবহেলা কিংবা সঠিকভাবে চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে যদি কোনো রোগীর মৃত্যু হয়, তাহলে জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। কষ্টের উদ্রেক ঘটে। এছাড়াও হাসপাতালের বহির্বিভাগে যেসব রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয় তাদের তথ্য আমাদেরকে দেওয়া হয় না। যদিও সেসব রোগীও ডেঙ্গু রোগের সম্ভাব্য উৎস স্থল কিন্তু তথ্যের অভাবে ওনারা আমাদের কার্যক্রমের বাইরে রয়ে যান। সেই জায়গাতে আমরা মনে করি, দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ আরও দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, যেকোনো রোগের ক্ষেত্রে আমরা যদি তা প্রতিরোধ করতে পারি তাহলে এতে খরচ কম হয়, দুর্ভোগ কম হয়। ডেঙ্গু রোগেও সেটা প্রযোজ্য। এটি মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। আর ভাইরাসের কোনো ওষুধ নেই। আমরা সিম্পমেটিক ট্রিটমেন্ট দিয়ে থাকি। কাজেই আমি সবাইকে অনুরোধ করব যেন ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে আমরা সজাগ থাকি। সিটি করপোরেশন কমন স্পেসগুলো পরিষ্কার করবে এবং সেখানে যেন পানি না জমে সে ব্যবস্থা করবে। কিন্তু আমাদের বাড়ি, আঙ্গিনা ও চারপাশ আমাদেরকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তাই, ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে নিজ স্বার্থেই আমাদেরকে সচেতন হতে হবে।
অনুষ্ঠানে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা ফজলে শামসুল কবির, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিম আহমেদ, অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর নারগিস মাহতাবসহ করপোরেশন ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিডফোর্ড হাসপাতালে পরিচালিত এই ‘বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন’ কার্যক্রমে শতাধিক মশককর্মী ও ২৫০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী অংশ নেয়।