এ বছর ভিসা ও টিকিট ইস্যুর অনিশ্চয়তা থাকলেও সবার সহায়তায় সব হজযাত্রী যেতে পেরেছেন এবং শেষ পর্যন্ত হজ যাত্রা সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন হজ্জ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম।
২০২৪ সালে হজ কার্যক্রম সমাপ্তি উপলক্ষে সোমবার (১০ জুন) রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
নানা কারণে এ বছর ভিসা ও টিকিট ইস্যুর অনিশ্চয়তা ছিল জানিয়ে হাব সভাপতি বলেন, আল্লাহর রহমতে, প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায়, ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং হাবের যৌথ প্রচেষ্টায় নিবন্ধিত হজযাত্রীদের প্রায় সব ভিসা ও টিকিট ইস্যু সম্ভব হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সবাই নিরাপদে সৌদি আরব পৌঁছেছেন। কিছু হজযাত্রী প্রতিবছরই অসুস্থতা, মৃত্যুজনিত কারণ বা অন্যান্য ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় গমন বাতিল করেন। সব মিলিয়ে এবার হজ যাত্রা সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার হজযাত্রা সবচেয়ে সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি, হজে যাওয়ার জন্য মধ্যস্বত্ব কাউকে টাকা পয়সা দিয়ে প্রতারিত হবেন না। সরাসরি নিবন্ধিত এজেন্সির সঙ্গে কথা বলবেন। এজেন্সির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিয়ে মানি রশিদ সংরক্ষণ এবং প্যাকেজের সুবিধাদি নিয়ে লিখিত চুক্তি করবেন। তাহলে প্রতারিত হবেন না।
প্রতিবছরের মত এবারও হজ ব্যবস্থাপনায় হাব সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কোন তারিখে কতজন গেলেন, কতজন টিকিট কেটেছেন, কতজনের ভিসা হয়েছে বা হয়নি এগুলো তদারকি করেছি। এখন একইভাবে সৌদি আরবে হাবের মনিটরিং টিম কাজ করছে। হাজিদের তারা সেবা দিচ্ছেন।
মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ কার্যকর হওয়ার পর থেকে হজ ব্যবস্থাপনার উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়ে তসলিম বলেন, মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ সার্ভিসের আওতায় এ বছর হজযাত্রীদের কষ্ট লাঘবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে গমন করা সব হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন সৌদি আরবের পরিবর্তে ঢাকা থেকেই সম্পন্ন হয়েছে। এতে কষ্ট লাঘব হয়েছে হজযাত্রীদের। তবে মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতের ময়দানে হাজিদের কিছুটা কষ্ট হবে। এ কষ্টের জন্য হাজিদের প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ হজকে জিহাদের সমপর্যায়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে বিমান ভাড়া নির্ধারণ করার দাবি জানিয়ে হাব সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এয়ারলাইন্স ও ফেলাইনাস হজযাত্রী পরিবহন করে। কিন্তু হজযাত্রী পরিবহন ভাড়া আশপাশের দেশ থেকে অনেক বেশি। এ ভাড়া কমানোর জন্য এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি স্বতন্ত্র টেকনিক্যাল কমিটি করা জরুরি। তারা যাচাই বাছাই করে যৌক্তিক বিমান ভাড়া নির্ধারণ করবে। তাতে এ ভাড়া কম বেশি হলেও কারও আপত্তি থাকবে না।
হজ নিবন্ধনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হাব সভাপতি বলেন, হজ এজেন্সির লাইসেন্স প্রদান করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে হাবের কোনো ভূমিকা থাকে না। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় যাকে লাইসেন্স দেয়, হাব ওই লাইসেন্সধারী এজেন্সিকে সদস্য করতে বাধ্য। নতুন লাইসেন্স প্রদান ও মালিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে হাবের মতামত নেওয়া একান্ত সমীচীন হবে।
আগামী ১৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার এবং সউদি রাজকীয় সরকারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক হজ চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশের জন্য এ বছর ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রীর কোটা বরাদ্দ হয়। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১৭ হাজার কোটা বরাদ্দ হয়। এ বছর ২৫৯টি হজ এজেন্সি অপারেটিং হজ এজেন্সির দায়িত্ব পালন করছে।
উল্লেখ্য, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য কোরবানি ছাড়া সর্বনিম্ন প্যাকেজ মূল্য জন প্রতি মোট ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা।