সারা বাংলা

নিখোঁজ যুবকের সন্ধানে মাদক কারবারির বাড়ির মাটি খুঁড়ে মিললো হাড়-খুলি

ঢাকার সাভারে নিখোঁজ যুবকের সন্ধানে এক মাদক কারবারির বাড়ির মাটি খুঁড়ে কয়েকটি হাড় ও মাথার খুলি উদ্ধার করেছে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তাদের ভাষ্য, ওই হাড় ও মাথার খুলি সাভারের ইমান্দিপুর এলাকা থেকে প্রায় ১১ মাস আগে নিখোঁজ যুবক তোফাজ্জল হোসেন ওরফে টুনোর (২৮)। মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধে তাকে হত্যার পর মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল।

মঙ্গলবার (১১ জুন) বিকেলের দিকে উপজেলার আনন্দপুর সিটি লেনের মাদক কারবারি স্বপনের বাড়ি থেকে হাড় ও মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়। এর আগে, গতকাল সোমবার দুপুর থেকে চলমান অভিযান রাতে স্থগিত করে পুলিশ পাহারা বসানো হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুর থেকে আবারও অভিযান শুরু করে ডিবি পুলিশ। 

নিখোঁজ টুনো সাভারের ইমান্দিপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই তিনি নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিল তার পরিবার।

মাদক কারবারি স্বপন সাভার পৌরসভার ইমান্দিপুরের শাহজাহানের ছেলে। তার সাভারের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। 

পুলিশ জানায়, গত ২ জুন সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের খনিজনগর এলাকার ভাড়া বাসা থেকে সীমা নামে এক নারী নিখোঁজ হন। ওই ঘটনায় গত ৬ জুন সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে খনিজনগর এলাকায় মাটিচাপা দেওয়া সীমা আক্তারের মরদেহ উদ্ধার হয়। এছাড়া সাইফুল এ ঘটনায় জড়িত আরও পাঁচজনের নাম প্রকাশ করে আদালতে জবানবন্দি দেন। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে, তিনি জানান, টুনো নামে আরেক ব্যক্তিকে হত্যার পর সাভারের আনন্দপুর সিটি লেনে মাদক কারবারি স্বপনের দুইতলা ফাঁকা বাড়ির নিচতলায় মাটির নিচে পুতে রাখা হয়েছে। এরই সূত্র ধরে গতকাল সোমবার ওই বাড়ির মাটি খুঁড়তে শুরু করে ডিবি।

সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার ধামরাই উপজেলার কুল্লা থেকে মাদক কারবারি স্বপনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। স্বপনের দেওয়া তথ্যে ওই বাড়িতে ফের মাটি খোঁড়া হয়। প্রায় সাত ফুট মাটির নিচ থেকে কয়েকটি হাড় ও মাখার খুলি উদ্ধার করা হয়।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সীমা হত্যাকাণ্ডে জড়িত মাদক কারবারি সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তোফাজ্জলের মরদেহের সূত্র পাওয়া যায়। এজন্য সোমবার ওই বাসার মাটি খোঁড়া হয়। মঙ্গলবার স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হলে তিনি তোফাজ্জলকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। তার দেখানো ঘরের নির্দিষ্ট জায়গার মাটি খুঁড়ে মরদেহের কয়েকটি হাড় ও মাথার খুলি পাওয়া যায়।’

তিনি বলেন, ‘স্বপন একজন সিরিয়াল কিলার। তিনি মাদক কারবারি। এর আগে ডিবির একটি টিম স্বপনের স্ত্রী ও স্থানীয় এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করে।’ 

মরদেহটি কীভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখানে লাশের পাশে যে শার্টটি পাওয়া গেছে। তার স্ত্রী এসে টুনোর শার্টটি শনাক্ত করেন। এর পরবর্তীতে আমরা ডিএনএ করে লাশটি টুনোর কিনা তা নিশ্চিত হব। তবে প্রাথমিকভাবে স্বপন স্বীকার করেছেন, এটি সেই ঘটনা ও এটি টুনোর মরদেহ। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করবো। এই ধরনের আরও কোনো নিখোঁজের অভিযোগ থাকলে সেটি ধরেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

এসপি বলেন, ‘মূলত মাদক কারবারের কারণেই তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। পরে টিনোকে অপহরণ করা হয়। তাকে শ্বাসরোধ করে মাটি চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় আরও কে কে জড়িত ছিল সে বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে হয়তো আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে।’

নিখোঁজ টুনোর চাচা ওসমান গণি বলেন, ‘ইয়াবা নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। স্বপন ১০-১২ জন শ্রমিক রেখে আনন্দপুরে ইয়াবা বিক্রি করতেন। একইভাবে ইয়াবা ইমান্দিপুরেও পাঠাতেন। কিন্তু টুনোরা প্রতিবাদ করতো যাতে ইমান্দিপুরে ইয়াবা না পাঠায়। এটি নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগতো। নিখোঁজর সময় ছিল রোজার মাস। ২৭ রমজানে টুনো আমার সঙ্গে তারাবি পড়ছে। তারপরই নিখোঁজ। আর খুঁজে পাইনি। থানায় বলেছি, অভিযোগ করেছি। অবশেষে ডিবি কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই।’