এই ম্যাচ জিতলে নিউ জিল্যান্ডের সামনে সুপার এইটে যাওয়ার ভালো সুযোগ থাকতো। কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় হলো না। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে তাদেরকে ১৩ রানে হারিয়ে সুপার এইটের টিকিট কাটলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টানা দুই ম্যাচ হেরে নিউ জিল্যান্ডের ভাগ্য ঝুলে রইলো অনেক সমীকরণের উপর।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ব্যটিং বিপর্যয়ে পড়েও শেরফান রাদারফোর্ডের বীরত্বে ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪৯ রান সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাব দিতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং তোপে ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৬ রান পর্যন্ত যেতে পারে নিউ জিল্যান্ড।
রান তাড়ায় নেমে শুরুটা ভালো করলেও তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারায় নিউ জিল্যান্ড। ডেভন কনওয়েকে ৫ রানে বিদায় করেন আকেল হোসেন। এরপর ফিন অ্যালেনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন রাচিন রবীন্দ্র। তবে এই জুটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। অ্যালেনকে ২৬ রানে বিদায় করে জুটি ভাঙেন আলজেরি জোসেফ।
দলের এই অবস্থায় ভরসা ছিলেন কেন উইলিয়ামসন। কিন্তু প্রতিদান দিতে পারলেন না কিউই দলপতি। ১ রান করে গুদাকেশ মোতির বলের বিদায় নেন তিনি। এরপর রাচীনকেও ১০ রানের মাথায় ফেরান মোতি। তাতে ৫৫ রানেই চার উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় নিউ জিল্যান্ড।
উইকেট পতনের এই মিছিলে যোগ দেন ১২ রান করা ড্যারিল মিচেলও। একপ্রান্ত আগলে পড়ে ছিলেন ফিলিপস। তাকে সঙ্গ দিতে ক্রিজে আসেন জিমি নিশাম। এই দুজনের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিল দল। তবে সময়ের দাবি মেটাতে ব্যর্থ হন দুজন।
নিশাম আউট হন ১১ বলে ১০ রান করে। ফিলিপস শেষদিকে চড়াও হতে গেলে ৩৩ বলে ৪০ রানেই শেষ হয় তার ইনিংস। এরপর টিম সাউদি ও টেন্ট বোল্ট দ্রুত বিদায় নিলে হারের দ্বারপ্রান্তে পৌছে যায় নিউ জিল্যান্ড। শেষ ওভারে শেফার্ডকে ৩ ছক্কা হাঁকিয়ে হারের ব্যবধান কেবল কমান মিচেল স্যান্টেনার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সেরা বোলার ছিলেন আলজেরি জোসেফ। ৪ ওভারে ১৯ রানের বিনিময়ে চার উইকেট দখল করেন এই পেসার। ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন গুদাকেশ মোতি। একটি করে উইকেট নেন আকেল ও রাসেল।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই নিউ জিল্যান্ডের বোলারদের চাপের মুখে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই ওপেনার ব্রেন্ডন কিং ও জনসন চার্লস দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই বিদায় নেন।শুরুতে কোনো রান না করেই বোল্টের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন চার্লস।
এরপর ক্রিজে আসেন নিকোলাস পুরান। তবে ১২ বলে ৩ চারে ১৭ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। পঞ্চম ওভারে শূন্য রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন রোস্টন চেজ। রভম্যান পাওয়েলকে নিয়ে দলকে উদ্ধারের চেষ্টা চালান ব্রেন্ডন কিং। কিন্তু তিনি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারছিলেন না। এর মধ্যেই ৫ বলে ১ রান করে টিম সাউদির বলে আত্মহুতি দেন দলনেতা পাওয়েল।
একপ্রান্তে আগলে চড়াও হতে চেষ্টা করছিলেন কিং। কিন্তু নিউ জিল্যান্ডের বোলিংয়ের কোনো জবাব জানা ছিল না তার কাছে। ১ ছক্কায় ১২ বলে ৯ রান করে তিনি বিদায় নিতেই চাপে পড়ে ক্যারিবীয়রা। এরপর আকেল হোসেনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন রাদারফোর্ড। দুজন মিলে ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন।
৪৯ রানেই ৫ উইকেট হারিইয়ে বসা ক্যারিবীয়রা যখন একশর আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায়, তখন দলকে আরও বিপদের দিকে ঠেলে দিয়ে ১৭ বলে ১৫ রান করে বিদায় নেন আকেল। আন্দ্রে রাসেল এসে ৭ বলে ১৪ রানের ক্যামিও খেলে ফিরে যান। রোমারিও শেফার্ড ১৩ রানে সাজঘরের পথ ধরেন।
আলজেরি জোসেফকে নিয়ে রাদারফোর্ড দলকে একশ রানের ঘর পার করেন। কিন্তু রাদারফোর্ডকে সঙ্গ দিতে পারলেন না তিনিও। সমান ৬ বলে ৬ রান করে বোল্টের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান জোসেফ। বাকি পথটা কেবল রাদারফোর্ডের গল্প।
উনিশতম ওভারে ড্যারিল মিচেলের ওপর মারাত্মক চড়াও হন রাদারফোর্ড। এক ওভারেই তিন ছক্কায় তুলে নেন ১৯ রান। সেই সঙ্গে তুলে নেন দলের মান বাঁচানো ফিফটি। তাকে কেবল সঙ্গটা দিয়ে গেছেন গুদাকেশ মোতি।
শেষ ওভারেও মিচেল স্যান্টেনারকে তুলোধুনো করে ১৮ রান তুলে দলকে লড়াকু পুঁজি এনে দেন রাদারফোর্ড। শেষ পর্যন্ত ৩৯ বলে ২টি চার ও ৬টি ছক্কার মারে ৩৯ বলে ৬৮ রান করে অপরাজিত থাকেন ক্যারিবীয় তারকা।