বাবা মানে তৃপ্ত হাসি, সুপ্ত ভালবাসা, বাবা মানে স্নিগ্ধ নয়নে, সফলতার পরিভাষা।
বাবা শব্দটির মাহাত্ম্য উপলব্ধি করতে গিয়ে দেখলাম কষ্টের পাহাড় অতিক্রম করা এক মানব। যার উদ্দেশ্য শুধু একটাই, পরিবার-পরিজনের সুখের সন্ধান। সন্তানের ভালোর জন্য স্রোতে মিশে গিয়েও অমরত্ব লাভ করেন যে ব্যক্তি, দূর থেকে প্রতিধ্বনিত হয় শুধু তারই জয়গান। তিনি এক আদর্শ বাবা।
সৌভাগ্যক্রমে আমি এক আদর্শ বাবার সন্তান। বাবার মন পড়তে না পারলেও মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ বারবার এটাই আমাকে বুঝিয়ে দেয় যে, মানুষ সহজ হওয়া ভাল। তবে সহজলভ্যতা কাম্য নয়। আমার বাবা একজন সাধারণত গোছের সাদামাটা ব্যক্তি।
জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে নিজেকে প্রমাণ করতে করতে যখন ক্লান্ত হয়ে গেছি, তখনই বাবা অনুপ্রেরণা দিয়ে হয়েছেন আমার পথের কাণ্ডারী। আমার বাবা পেশায় একজন শিক্ষক। নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন শত শত মানুষ। আমার বাবা আমার জীবনের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তার হাতেই আমার গণিতের হাতেখড়ি। জীবনের যতটা অর্জন সেটা শুধুই আমার বাবার জন্য সম্ভব হয়েছে। আমার বাবা শুধু আদর্শ বাবা নন, আমার বাবা একজন আদর্শ সন্তানও। বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, দায়িত্ব, কর্তব্য সবকিছু বাবার থেকেই শেখা।
একটা ঘটনা বলি। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী, তখন আমার দাদু শয্যাশায়ী। এ অবস্থায় আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে যেতে চাইনি। তখন বাবা সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যান। সব পরীক্ষা, ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি ১৪ দিন চট্টগ্রামে আমার সঙ্গে থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য রাজশাহী নিয়ে যান। ওই সময়ের প্রতিটা মূহুর্তে আমি বাবাকে দাদুর জন্য ছটফট করতে দেখছি। এতোটা দূরে থেকেও বাবা দাদুকে মূহুর্তের জন্যেও চোখের আড়াল করেননি। আবার বাবার দায়িত্ব পালন থেকেও সরে যাননি। দুঃখের বিষয় হলো আমি আর বাবা চট্টগ্রাম, রাজশাহী ঘুরে বাড়ি ফেরার কিছুদিন পরই দাদু পরলোকে গমন করেন। তবে কখনো বাবাকে দাদুর প্রতি সেবায় কোনো ত্রুটি রাখতে দেখিনি।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল আসলো। সেখানে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অষ্টম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪৩তম স্থান অর্জন করি। প্রকৃত অর্থে এ অর্জন আমার নয়, এ অর্জন আমার বাবার ত্যাগের।
বাবা অনেক রাগী। তাই সাবলীলভাবে বলে উঠেতে পারিনি, বাবাকে কতটা ভালোবাসি। বাবাকে শুধু এতোটুকুই বলতে চাই, তোমাকে অনেক ভালোবাসি বাবা। তোমার বাবা-মা নেই তো কি হয়েছে? আমি আর ভাই কখনো তোমাকে অনাথ হতে দিব না। আমরাই তোমার বাবা-মা।
অন্নদামঙ্গল কাব্যের ঈশ্বরী পাটুনী যেমন বর স্বরূপ অন্নপূর্ণাদেবীর কাছে চেয়েছিলেন- ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।’ সে রকমই আমি ঈশ্বরের কাছে এ প্রার্থনা করি যে- ‘আমার বাবা আমার কাছে সন্তান স্বরূপ। আমার বাবাও যেন থাকে দুধে-ভাতে।’
লেখক: শিক্ষার্থী, মার্কেটিং বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ ২০২২-২৩, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়