সৈকত ইকবাল ঢাকার উত্তরায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। বাবা, মা, ছোট ভাই, স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে থাকেন টঙ্গীতে। ঈদের ভোগান্তি এড়াতে বাবা, মা, ছোট ভাই ও সন্তানকে এক সপ্তাহ আগে গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। শুক্রবার (১৪ জুন) পর্যন্ত অফিস থাকায় শনিবার (১৫ জুন) দুপুরে স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামে ঈদ করতে মোটরসাইকেলে রওনা দিয়েছেন তিনি।
শুধু সৈকত ইকবাল নয়, তার মতো দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক জেলার মানুষ ঢাকায় মোটরসাইকেলে আসা-যাওয়া করেন। ফলে ঈদের সময় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকারের আধিক্য না থাকলেও মোটরসাইকেলের পারাপার ছিল চোখে পড়ার মতো।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যানবাহন পারাপার অর্ধেক কমে গেছে। ফলে ভোগান্তি কম হওয়ায় মোটরসাইকেলে স্বস্তিতে ঘাট পার হতে পারছেন।
শনিবার (১৫ জুন) সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়ামুখী ১ হাজার ৬৭টি মোটরসাইকেল পার হয়েছে৷ অথচ এ সময় বাস পার হয়েছে ২১৩টি, প্রাইভেটকার ৪৪৩টি, মাইক্রোবাস ৮২টি, জিপ ৩টি, পিকআপ ৬৪টি, ডেলিভ্যারি ভ্যান ৫৫টি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ৪টি ও ট্রাক ১৯৩টি।
সকাল থেকে ঘাট এলাকায় যানবাহন ও যাত্রীর ভিড় বাড়লেও ভোগান্তি ছাড়াই পাটুরিয়া ঘাট পার হতে পারছেন। ফেরির পাশাপাশি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ২০টি লঞ্চ চলাচল করছে। ঘাটে যাত্রীদের ভোগান্তি নেই।
ফরিদপুরগামী সিয়াম আহমেদ বলেন, ধামরাইতে চাকরির সুবাদে প্রায় সময় ছুটিতে বাড়ি যান। পাটুরিয়া ঘাট হয়ে গেলে বাড়িতে যেতে সময় কম লাগে। কাছাকাছি দূরত্বের হওয়ায় মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেন। কয়েক বছর আগে ঘাট এলাকায় সিরিয়ালে ফেরিতে উঠতে হতো। এখন যানবাহনের চাপ না থাকায় সরাসরি ফেরিতে মোটরসাইকেল নিয়ে ওঠা যায়।
মোটরসাইকেল আরোহী তৃষা রহমান বলেন, দীর্ঘদিন পর ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যেতে এমনিতেই ভালো লাগে। তারমধ্যে মোটরসাইকেলে অনেক স্বস্তিতে বাড়িতে যাওয়া যায়। প্রয়োজনে যেখানে ইচ্ছা উঠানামা করা যায়। বাসে গেলে অনেক সময় মহাসড়কে যানজটে আটকা পড়ে ভোগান্তি বাড়ে।
আরেক আরোহী লিখন সরকার বলেন, ‘দুই বন্ধু মিলে মোটরসাইকেলে রাজবাড়ীর দিকে রওনা দিয়েছি। ঘাট এলাকায় চাপ নেই। নবীনগর থেকে পাটুরিয়া পর্যন্তও তেমন যানজট নেই। বাসের চেয়ে মোটরসাইকেল যাত্রা বেশি আরামদায়ক।’
মানিকগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক কে এম মেরাজ উদ্দিন বলেন, ঢাকা- আরিচা মহাসড়কসহ পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা কাজ করছেন। মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীদের মেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, সকাল ৬টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া প্রান্তে ফেরির ৬২টি ট্রিপ দেওয়া হয়েছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল পার হয়েছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ১৮টি ফেরি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। ফলে যেকোনো যানবাহন ও যাত্রীরা ভোগান্তি ছাড়াই ফেরিঘাট পার হতে পারছেন।