জাতীয়

গণপরিবহনে বকশিসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায়

রাত পোহালেই ঈদুল আজহা। এ ঈদকে সামনে রেখে চার দিন আগ থেকেই (১৩ জুন) রাজধানীতে ঈদ বকশিসের নামে গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ঈদের আগের দিন রোববারও (১৬ জুন) অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি সিটিং সার্ভিসের নামে গলাকাটা ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

যাত্রীদের অভিযোগ, কোনো কোনো গণপরিবহনে ১০ টাকার স্থলে ২০, ২০ টাকার স্থলে ৩০, ৩০ টাকার ভাড়া ৫০ এবং ৫০ টাকার স্থলে ১০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।

রাজধানীর রায়েরবাগ, শনির আখাড়া, মালিবাগ, রামপুরা, শাহবাগ, সদরঘাট, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, গাবতলী, মহাখালী, ফার্মগেট— যেখান থেকেই যাত্রীরা উঠুক না কেন, দিতে হচ্ছে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০-৫০ টাকা বেশি।

রোববার একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, বাড়তি ভাড়া আদায়ের কারণ জানতে চাইলে যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন কন্ডাক্টর ও হেল্পাররা। অন্যদিকে, বাসচালক ও সহকারীদের দাবি, ঈদ উপলক্ষে এ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এটা ঈদ বোনাস।

তারাবো পরিবহনের বাসের যাত্রী খালেদ খান বলেন, সরকারি ছুটির দিন (১৩ জুন থেকে) থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। সবাই কি সরকারি অফিসে কাজ করে? সবাই কি ঈদের বোনাস পায়? পেলেও সামান্য বোনাস। তা যদি বাসে দিয়ে দিই, তাহলে খাব কী?

তিনি বলেন, আজও জোর করে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শনির আখড়া থেকে গুলিস্তান রুটে ২০ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। মৌচাক থেকে গুলিস্তান ৩০ টাকা, নেওয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। সবার বোনাস দেওয়ার শক্তি আছে? সবাই কি বড় চাকরি করে? এগুলো দেখার কেউ নেই। সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সেক্টরে জিম্মি হচ্ছে। অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে সময় পরিবহনের সুপারভাইজার মো.বাচ্চু বলেন, আমাদের মা-বাবা আছে, সন্তান আছে। তাদেরও ভালো-মন্দ খাওয়াতে হয়। যাত্রীদের চলাচলের জন্য আমরা সার্ভিস দিই। বাসমালিক তো আমাদের বোনাস দেয় না। কী আর করব, যাত্রীদের কাছ থেকে ঈদ বোনাস নিচ্ছি। অফিস খোলার দিন থেকে বুধবার (১৯ জুন)  থেকে ঈদ বোনাস নেব না।

মহাখালী থেকে রায়েরবাগ এসেছেন আবু জাফর শান্ত। তিনি বলেন, ৫০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। আমি অল্প আয়ের মানুষ। আমি কোনো বোনাস পাইনি। কাজে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। বোনাসের নামে বাড়তি টাকা দিতে দিতেই শেষ।

আকাশ নামের আরেক যাত্রী বলেন, বাসে উঠলেই ১০ টাকার ভাড়া দিতে হচ্ছে ২০ টাকা।

বাসযাত্রী আব্দুর রহিম বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা ঈদের সময় জোট বাঁধে। ঈদ বোনাসের নামে বাড়তি টাকা না দিলে কেউ যেতে পারব না। প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের নাজেহাল করে। বাধ্য হয়েই ঈদ বোনাসের নামে বাড়তি ভাড়া দিচ্ছি। চিটাগাং রোড থেকে পাটুরিয়া ঘাট ভাড়া ২২০ টাকা, নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা।

শ্যামলী থেকে চানখারপুল সিএনজি অটোরিকশায় আসা যাত্রী সেলিম বাবু বলেন, অন্য সময় এ দূরত্বে ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, তবে আজ ৪০০ টাকা ভাড়া দিতে হলো।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক, অলিগলিতে চলাচল করা রিকশাচালকরাও ভাড়ার সঙ্গে বকশিস হিসেবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক যাত্রী।

ফুলবাড়িয়া কন্ট্রোল রুম এলাকায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সোহের বলেন, গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায় করার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, ঈদের আগে-পরে যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা আদায় করা যাবে না। শ্রমিকরা ঈদ বকশিসের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে পারবে না। অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে  ব্যবস্থা নেওয়া হবে।