কোরবানি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি পালন করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্তেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না, তার ব্যাপারে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যার কোরবানি করার সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (মুস্তাদরাকে হাকিম, আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব)। তাই আমাদের বিশুদ্ধ নিয়তে কোরবানি করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় দশ বছর অবস্থান কালে প্রতি বছর কোরবানি করেছেন এবং সাহাবিদের কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ ও উট- এই ছয় ধরনের পশু দ্বারা কোরবানি দিতে হবে, এ ছাড়া অন্য কোনো পশু দ্বারা কোরবানি বৈধ নয়।
কোরবানির গোশতের বিধান
১. কোরবানির পশুর গোশত তিন ভাগ করা উত্তম। এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ গরিব-মিসকিনের জন্য, আর এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর জন্য। তবে এভাবে বণ্টন করা ওয়াজিব নয়, মুস্তাহাব বা উত্তম। কুরবানিদাতা যদি সম্পূর্ণ গোশত নিজে রেখে দেন, এতেও কোরবানির কোনো সমস্যা হবে না, তবে তা উত্তম নয়। ২. গোশত বা চামড়া কসাই বা জবেহকারীকে বিনিময়স্বরূপ দেয়া যাবে না, যদি কেউ দিয়ে থাকে তাহলে তার মূল্য দান করে দেবে। তবে ন্যায্য পারিশ্রমিক দেয়ার পর হাদিয়া বা উপহার হিসেবে দেয়া যাবে। ৩. শরিকদের মাঝে গোশত মেপে বণ্টন করতে হবে। তবে অনুমান করে বণ্টন করলে ক্ষুর, পায়া ইত্যাদি সবার ভাগে গেলে তাও শুদ্ধ হবে।
কোরবানির চামড়ার বিধান
১. কোরবানির পশুর চামড়া ব্যবহারের উপযুক্ত করে কোরবানিদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে বিক্রি করলে পুরো মূল্য দান করে দিতে হবে। দানের ক্ষেত্রে গরিব আত্মীয়-স্বজনকে প্রাধান্য দেয়া উত্তম। আর যে সকল ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গরিব ও এতিম ছাত্রদের ভরণ-পোষণ করা হয় এবং ইসলামী শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়, সেখানে চামড়ার মূল্য দান করলে অধিক সওয়াবের আশা করা যায়। কারণ এতে একদিকে গরিব-এতিমদের সাহায্য করা হয়, অপরদিকে ইসলামী শিক্ষার সহযোগিতা করা হয়। ২. পশুর দেহ থেকে চামড়া আলাদা করার আগে তা বিক্রি করা জায়েয নয়। ৩. কোরবানির চামড়া পাওয়ার প্রকৃত দাবিদার তারাই, যারা জাকাত-ফেতরা ও দান-সদকা ভোগ করতে পারে। তাই কোরবানির চামড়া বিক্রি করার পর এর মূল্য দিয়ে কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা যাবে না। তেমনিভাবে মসজিদ, মাদরাসা, হাসপাতাল ইত্যাদির মেরামত কিংবা নির্মাণেও তা ব্যয় করা যাবে না।