দেশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং ত্যাগের মহিমায় সোমবার (১৭ জুন) ঈদুল আজহা পালিতে হচ্ছে। তবে সুনামগঞ্জের অনেক এলাকার মানুষ ঈদ উদযাপন করতে পারেনি। গত তিন দিন পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে জেলার লক্ষাধিক মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক দিনের অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। আজ সোমবার (১৭ জুন) দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জের পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সুরমা নদী তীরবর্তী বেশ কয়েকটি এলাকার বাসা বাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। নদীর তীরের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার চিন্তায় সময় কাটছে।
জেলার অনেক এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। এ অবস্থায় ঈদগাহে নামাজ আদায় করতে পারেনি। স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায় করেন। অনেক মসজিদে জায়গা স্বল্পতার কারণে বাইরে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে হয়েছে।
উজানের ঢলের সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তে নদ-নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া-লক্ষীপুরের মধ্যস্থলের বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। বাঁধ ভাঙায় লক্ষ্মীপুর, নোয়াপাড়া, রসরাই, সুলতানপুর, হাছনবাহার গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকের বসতঘর নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বসতঘর ভেঙে গরু, ছাগল, ও আসবাবপত্র পানিতে ভেসে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া খাসিয়ামারা নদীর বেড়িবাঁধ ও চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ও সড়ক প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। কিছু জায়গা থেকে পানি নামলেও অন্যদিকে নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার সুলতানপুরের গ্রামের আব্দুল মুকিত মিয়া বলেন, ‘আমাদের ঈদ শেষ হয়ে গেছে। নদীর পানি বাড়তে বাড়তে আমার ঘরে ঢুকে গেছে। ঘরের জিনিসপত্র সব ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর পানি বাড়লে বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিয়ে চিন্তায় আছি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নদীর পানি ইতোমধ্যে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) সুনামগঞ্জে ৩৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের পৌর শহরের বনানীপাড়ার বাসিন্দা রায়হান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এবার ঈদ উদযাপন বড় করে করব বলে ভেবেছিলাম। বন্যার পানিতে কিছু হলো না। রাত থেকে বৃষ্টি আর বন্যার পানিতে উঠান ভরে গেছে। বিকাল হয়ে গেছে এখনও গরু কোরবানি করতে পারছি না। অন্য কোথাও নিয়ে যে কোরবানি করব, এমন শুকনা জায়গা পাচ্ছি না।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার রাইজিংবিডি-কে বলেন, ‘ভারতে ও সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হচ্ছে, এভাবে যদি বৃষ্টি অব্যাহত থাকে তাহলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।’
আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।