রাজশাহীর মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা টানা পাঁচ বছর পর এবার লাভের মুখ দেখেছেন। ২০১৯ সাল থেকে তারা লোকসান গুনে আসছিলেন। তবে এবার কোরবানির পশুর চামড়াপ্রতি গড়ে অন্তত ২০০ টাকা লাভ হয়েছে বলে জানিয়েছেন। বাজারে তুলনামুলক গরুর চামড়ার দামও বেশি ছিল। তবে ছাগলের চামড়ার এবারও দাম ছিল না।
রাজশাহী নগরীর সপুরা এলাকার লেদ ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম প্রতিবছর কোরবানির ঈদের দিন চামড়া কেনেন। তারপর সেই কাঁচা চামড়া বিক্রি করেন। শহিদুলের দাবি, ২০১৯ সাল থেকে প্রতিটি ঈদের চামড়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে এবার কিছুটা লাভ করেছেন। তিনি এ বছর গড়ে ৪০০ টাকা দরে চামড়া কিনেছেন। আর বিক্রি করেছেন ৬০০ টাকায়। সেই অনুযায়ী প্রতিটি চামড়ায় ২০০ টাকা করে লাভ হয়েছে তাঁর।
তবে ঈদের দিন অনেক বিক্রেতা চামড়ার ভালো দাম পাননি। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কোনো চামড়ার দাম দিয়েছেন মাত্র ২০০ টাকা, আবার কোনো কোনো চামড়া তারা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে কিনেছেন। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সেখেরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এবার কয়েকটি গরু কোরবানি হয়। সেখানে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দামের একটি গরুর চামড়া মৌসুমি ব্যবসায়ীকে ৬০০ টাকায় কিনতে দেখা যায়। একইস্থানে প্রায় লাখ টাকা দামের চামড়া কেনা হয় ৪০০ টাকায়। তবে সেখানে কাউকে ছাগলের চামড়া কিনতে দেখা যায়নি। মাটিতে না পুঁতে কয়েকটি ছাগলের চামড়া বিনামূল্যে মৌসুমি ব্যবসায়ীর ভ্যানে তুলে দিতে দেখা যায়।
রাজশাহী নগরীর রেলগেট এলাকায় ঈদের দিন চামড়া কিনছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। মাদ্রাসা ও এতিমখানার পক্ষ থেকে এখানে চামড়া বিক্রি করতে আসছিলেন অনেকে। মাওলানা সুলতান আহমেদ একটি গরুর চামড়া এনে দাম চান এক হাজার টাকা। মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী এটির দাম দিতে চান ২০০ টাকা। শেষে ৩০০ টাকায় চামড়াটি কেনেন তিনি।
জুলফিকার আলী বলেন, ‘টানা পাঁচ বছর ধরে লস দিয়ে আসছি। এবার তাই সতর্ক হয়েই চামড়া কিনছি। ভালো চামড়া হলে ৬০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত দিচ্ছি। খুব ভালো না হলে ২০০ বা ৩০০ টাকা দিচ্ছি। গত কয়েকবছর না বুঝে বেশি দামে চামড়া কিনে ঠকেছি। এবার তা করছি না।’
মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহের পর পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর এলাকায় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে নিয়ে বিক্রি করেন। সেখানে ছোট ও মাঝারি আকারের চামড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। আর বড় গরুর চামড়া ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়। চামড়া বিক্রির পর মৌসুমি ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দাম মোটামুটি ভালোই পাওয়া গেছে। এবার অন্তত লোকসান হবে না। চামড়ার বাজারটা এ রকম থাকলেও হয়।’
রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘একেকটি চামড়ায় লবণ দেওয়ার খরচ আছে প্রায় ২০০ টাকা। তাও আমরা এবার ৬০০ থেকে ৯০০ বা এক হাজার টাকা পর্যন্ত দরে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনেছি। তাদের এবার লোকসান হয়নি।’
তিনি জানান, মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অনেকে বিনামূল্যে ছাগলের চামড়া নিয়ে যান। তারা ৩০ থেকে ৫০ টাকায় এসব চামড়া কিনেছেন। লবণ মাখানো সব চামড়া এক সপ্তাহ পর নাটোর এবং ঢাকায় চলে যাবে।
ঢাকার বাইরে এবার গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। গত বছর এ দাম ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। আর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম এ বছর ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ দাম হিসাবে চামড়া কেনা না হলেও গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার রাজশাহীতে বেশি দামেই চামড়া কেনাবেচা হয়েছে।