লবণের দাম বৃদ্ধি, নির্ধারিত বাজার না থাকা, ট্যানারির মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা না পাওয়া, পুঁজি সংকটসহ নানা অসুবিধায় জমেনি খুলনার কোরবানির পশুর চামড়ার বাজার। ফলে সরকার ঘোষিত মূল্যের অনেক কম দামে চামড়া বিক্রি হয়েছে। নিরুপায় হয়ে বিক্রেতারা অল্প দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। বড় গরুর চামড়া ৫০০ থেকে সাড়ে ৫৫০ টাকা দরে, ছোট গরুর চামড়া ৩০০ টাকা দরে, আর ছাগলের চামড়া নামমাত্র দামে বিক্রি হয়েছে।
খুলনা মহানগরীর পাওয়ার হাউজ মোড়ে কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা হচ্ছে। ঈদের দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলে। স্থায়ী ব্যবসায়ী, ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী ও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় মুখরিত ছিল খুলনার পাওয়ার হাউজ মোড়। খুলনায় স্থায়ী চামড়ার মার্কেট না থাকায় ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনাবেচা করেছেন সড়কের উপর।
ব্যবসায়ীরা জানান, মূলত পুঁজি সংকট ও সংরক্ষণের স্থান না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী চামড়া কেনা সম্ভব হয়নি। সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে চামড়া কেনেন ব্যবসায়ীরা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী, মৌসুমি ব্যবসায়ী ও পশুর চামড়ার মালিকরা। সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকা জেলায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫৫-৬০ টাকা ও ঢাকার বাইরে ৫০-৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হলে ও চামড়া বিক্রি করতে গেলে সেই মূল্য দেননি ব্যবসায়ীরা। এতে ক্ষুদ্ধ খুচরা চামড়া বিক্রেতারা। বিশেষ করে বিভিন্ন মাদ্রাসায় দানকৃত চামড়ার ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ হয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
খুলনার শেখপাড়া চামড়াপট্টির শেষ দোকানটিও বন্ধ হয়ে গেছে ২০১৯ সালে। এখন সেখানে চামড়ার দোকান নেই। চামড়া ব্যবসায়ীরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে চামড়া সংরক্ষণ করেছেন। গত পাঁচ বছরে চামড়া বেচাকেনার জন্য নতুন কোনো বাজারও তৈরি হয়নি। ফলে সংরক্ষণের জায়গা না থাকায় প্রতিবছর কোরবানির ঈদে বিপুল সংখ্যক চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় এবারও শের-এ বাংলা সড়ক এবং শেখপাড়া বি কে রায় সড়কে চামড়া সংরক্ষণের চেষ্টা করেন তারা।
মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আবুল হোসেন জানান, পাঁচটি গুরুর চামড়া নিয়ে আসেন। দুই হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। একদিন রাখলে পঁচে যাবে বলে পানির দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। এমন চলতে থাকলে মাদ্রাসা চালাতে অসুবিধা হয়ে যাবে।
চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে নগরীর জিরো পয়েন্টে দুটি গুদামে এবং নগরীর ট্রাক টার্মিনালের পাশে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে চামড়া মজুত করা হয়। ছোট ব্যবসায়ীরা সারা বছর চামড়া কিনে এ দুই স্থানেই মজুত করেন। কিন্তু কোরবানির ঈদে বিপুল পরিমাণ চামড়া আসায় সেখানে মজুত রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
খুলনা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কার্তিক ঘোষ বলেন, খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ টাকা ঢাকার ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের কাছে বকেয়া রয়েছে। এ ঈদেও টাকা কেউ পরিশোধ করেননি। ফলে এ বছর চামড়া কেনার মতো পুঁজি ছিল না কারও কাছে। ব্যাংকও চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয় না। ফলে সংরক্ষণের জায়গার মতো পুঁজি সংকটেও ভোগেন তারা।
খুলনা জেলা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুস সালাম ঢালী জানান, এবার ৫০ হাজার গরু ও ৩০ হাজার ছাগলের চামড়া কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এর অন্যতম কারণ পুঁজি সংকট এবং সংরক্ষণের জায়গার অভাব।
তিনি আরও জানান, খুলনায় চামড়া ব্যবসায়ীদের স্থায়ী চামড়ার মার্কেট না থাকায় তারা সড়কের উপর অস্থায়ীভাবে চামড়া কেনাবেচা ও প্রক্রিয়াজাত করেছেন। ট্যানারি মালিকদের কাছে খুলনার ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা বকেয়া পাওনা থাকায় তারা চামড়া কিনতে পারছে না। ফলে বিপাকে পড়েছেন খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীরা।