অর্থনীতি

বিপিসির ৯ বছরে মুনাফা ৫৭ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা

জ্বালানি তেল বিক্রি করে ৯ বছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) গত ৯ বছরে মুনাফা করেছে ৫৭ হাজার ৩৮৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

বিপিসি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে গত দুই মাসে দুই দফা তেলের দাম ‘সমন্বয়ের’ নামে বৃদ্ধি করেছে। অর্থনীতিবীদরা বলছেন, মূলত তেল ও বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ানোর কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি কমছে না। 

অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত ‘অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৪’ এ বিপিসির মুনাফার এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, বিপিসি ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর মোট ১০ অর্থবছরে শুধুমাত্র ২০২১-২০২২ অর্থবছর বাদে আর সব বছরে তেল বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা করেছে। যেমন ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বিপিসির মুনাফা হয়েছে ৪ হাজার ১২৬ কোটি টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে মুনাফার পরিমাণ ছিলো ৯ হাজার ৪০ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১৬-২০১৭ এবং ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে মুনাফার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৮ হাজার ৬৫৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং ৫ হাজার ৬৪৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০১৮-২০১৯ তে ৪ হাজার ৭৬৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ২০১৯-২০২০ তে ৫ হাজার ৬৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

একইভাবে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বিপিসি মুনাফা করেছে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৫৫৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এরপরের অর্থবছরে শুধু প্রতিষ্ঠানটি  এক হাজার ৯৮৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছিল। কিন্তু ২০২২-২০২৩ আবার মুনাফা ধারায় ফিরে আসে বিপিসি। এ বছর মুনাফা হয়েছিল ৫ হাজার ৬৫৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। চলতি ২০২৩-২০২৪ বছরে বিপিসির মুনাফা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৮৭৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বর ২০১৪ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম হ্রাস পায় বিপিসিকে এখন আর সরকারের ভর্তুকি দেওয়া লাগছে না। তবে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপিসি সেই বছর ২ হাজার ৭০৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা লোকসান দেয়েছিল।

উল্লেখ্য, দেশে প্রতি বছর জ্বালানি তেলের চাহিদা ৬৫ লাখ টন। এর আবার ৭৩ শতাংশ ডিজেল দ্বারা পূরণ করা হয়। ডিজেলের প্রায় পুরোটা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। তবে অকটেনের চাহিদার অর্ধেকের বেশি এবং পেট্রোলের পুরোটাই দেশে উৎপাদিত হয়। তাই দেশে উৎপাদিত এই দুই পণ্যের দাম বাড়ানোকে অনেকে অযৌক্তিক এবং অন্যায় বলেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রতি লিটার জ্বালানি তেলে সরকার ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্স নেয়। তাই বর্তমান বাস্তবতায় দেশের জ্বালানি তেলের দাম না বাড়িয়ে এটি আরও কমিয়ে দেওয়া যায়। এর ফলে ভোক্তাদের যেমন একটু সাশ্রয় পাবে, তেমনি দেশে মূল্যস্ফীতি হার কমে আসবে।

জানা গেছে, গত ৯ মাস ধরে দেশে মূল্যষ্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে। অন্যদিকে, খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ১০ ভাগ অতিক্রম করেছে।