সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের ফলে সম্ভাব্য ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড় ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। এ পরিস্থিতিতে পাহাড়ে অবস্থানকারীদের সতর্ক করার পাশাপাশি পাহাড় ধসে জানমাল রক্ষায় নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেলে চট্টগ্রামের পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় পাহাড় কেটে অবৈধ বসবাসকারীদের অবিলম্বে সরে যাওয়ার নির্দেশনার পাশাপাশি পাহাড়ে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের যেসব অবৈধ সংযোগ রয়েছে সবগুলো আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানান, চট্টগ্রামে ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড় ধসের সতর্কতার ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগরীর আকবরশাহ, বিজয়নগর, ১নং ঝিল, টাংকির পাহাড়, আমিন জুট মিল এলাকা, পাহাড়িকা, সমবায় আবাসিক, সমসামিত গৃহ নির্মাণ, মিয়ার পাহাড়, মুরাদপুর রেল স্টেশন সংলগ্ন রেলওয়ের পাহাড়, আকমল আলী ঘাট, লালখান বাজারের পোড়া কলোনি বস্তি এলাকা, ঢেবারপাড়, বাকলিয়া বন্দর, মতিঝর্না, বাটালি হিলসহ মহানগরের সকল গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জনগণকে সচেতন করে মাইকিং করা হচ্ছে।
এ ছাড়া পাহাড়ের আশেপাশের স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসাগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় মহানগরের সকল সার্কেলের সহকারী কমিশনারবৃন্দ (ভূমি) সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পাহাড়ি এলাকাগুলোতে মাইকিং ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত জনসাধারণকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাবার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে তাদের স্ব স্ব এলাকায় নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি সমন্বয়ের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সকল উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্টসহ সকল স্বেচ্ছাসেবী দলকে সক্রিয় রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৫ হাজার ৩০০টি অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এসব সংযোগ দিয়ে পাহাড়ে ঝুকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এতে একটু বৈরি আবহাওয়া হলেই সেখানে পাহাড় ধসের শঙ্কা দেখা দিচ্ছে। তাই এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেন বিভাগীয় কমিশনার। ১৫ দিন পর পর এ সংক্রান্ত বিষয়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে তথ্য দেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।
এ ছাড়া পাহাড়ে কোনো অবৈধ গ্যাস আছে কিনা সেটি জানানোর নির্দেশ দেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিসট্রিবিউশন লিমিটেডের প্রতিনিধিকে। তাকে ১৫ দিন পর পর এ তথ্য পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে জানানোর নির্দেশ দেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রাম নগরের ২৬টি পাহাড়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছি। কোনো অবস্থাতে পাহাড় কাটা যাবে না। পাহাড় থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে ১০ একর খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। গত এক বছরে শুধু মহানগরে ৫১টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সেখান থেকে ১১টি পরিবারকে সরিয়ে আনা হয়েছে।