খেলাধুলা

রোমাঞ্চ ছড়িয়ে দ. আফ্রিকার জয়ের হাসি

রোমাঞ্চ, উত্তেজনা, উন্মাদনা ছড়াল সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচে পাওয়া গেল টি-টোয়েন্টি আসল আবহ। যেখানে ব্যাট-বলের লড়াই হলো জম্পেশ। সঙ্গে ফিল্ডিং হলো চোখ ধাঁধানো। ক্যাচিং হাই ক্লাস। কেউ কাউকে ছাড় দেয় না। সামর্থ্যের শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যায় লড়াই। শেষে জয়ের হাসিটা হেসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

ইংল্যান্ডকে ৭ রানে হারিয়ে সুপার এইটে দ্বিতীয় জয় তুলে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আগে ব্যাটিং করে দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেটে ১৬৩ রান করে। জবাবে ইংল্যান্ড সমান উইকেটে ১৫৬ রানের বেশি করতে পারেনি। 

শেষ ৬ বলে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য ১৪ রান দরকার ছিল। হ্যারি ব্রুকের ব্যাট যেভাবে হাসছিল তাতে ওই রান তাড়া হয়ে যেত অনায়েসে। দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের পথে কাঁটা ছিলেন একমাত্র তিনিই। পেসার নরকিয়ে প্রথম বলে তাকে ফিরিয়ে জয়ের এপিটাফ লিখে দেন। যদিও তাকে ফেরানোর মূল কৃতিত্বটা যায় আইডেন মার্করামের। প্রায় ১৮ মিটার পেছনে দৌড়ে, মিড অন থেকে লং অনে গিয়ে শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে ডাইভ দিয়ে বল তালুবন্দি করেন মার্করাম। এরপর আর ইংলিশরা ম্যাচটা নিজেদের করে নিতে পারেনি। ৬ রান যোগ করে পরাজয়ের ব্যবধান কমান কুরান ও আর্চার।     

লক্ষ্য তাড়ায় ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের শুরুটা একদমই ভালো হয়নি। ৬১ রান তুলতেই ড্রেসিংরুমে চার ইংলিশ ব্যাটসম্যান। জীবন পাওয়ার পরও বেয়ারস্টো ১৬ রানের বেশি করতে পারেননি। এর আগে ফিল সল্ট করেন মাত্র ১১ রান। অধিনায়ক জস বাটলার সীমানায় আটকে যান ১৭ রানে। মঈন আলীর ব্যাট থেকে ৯ রানের বেশি আসেনি।

নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সঙ্গে গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তাতে স্বল্প পুঁজি নিয়েও ম্যাচটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে হ্যারি ব্রুক ও লিয়াম লিভিংস্টোনের প্রতি আক্রমণে এলোমেলো হয়ে যায় তাদের বোলিং। থিতু হওয়ার পর বাউন্ডারির ফোয়ারা ছুটিয়ে চোখ রাঙানি দেন তারা। 

বার্টমানের করা ১৭তম ওভারে ২১ রান তুলে ব্রুক ও লিভিংস্টোন জয়ের ব্যবধান ১৮ বলে ২৫ রানে নামিয়ে আনেন। তখন মনে হচ্ছিল ইংলিশদের জয় কেবল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু পরের ওভারেই ম্যাচ পাল্টে যায়।  

রাবাদা ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে লিভিংস্টোনকে আউট করে ভাঙেন ভয়ংকর এই জুটি। ৪২ বলে ৭৮ রান করেন তারা। ওই ওভারে মাত্র ৪ রান পায় ইংল্যান্ড। পরের ওভারে আসে ৭ রান। মূলত এই দুই ওভারে কোনো বাউন্ডারি না আসায় শেষ ওভারে লক্ষ্য ১৪ রানে আটকায়। শেষ পর্যন্ত ৭ রানে আক্ষেপে পুড়তে হয় তাদের। লিভিংস্টোন ১৭ বলে করেন ৩৩ রান। ব্রুক ৩৭ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন ৭ চারে।   

এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং ছিল অনেকটাই সাদামাটা। রান পেয়েছেন কেবল দুই ব্যাটসম্যান, কুইন্টন ডি কক ও ডেভিড মিলার। ডি কক ৩৮ বলে ৫০ রান করেন ৪টি করে চার ও ছক্কায়। মিলারের ব্যাট থেকে ২৮ বলে আসে ৪৩ রান। ৪ চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা হাঁকান কিলার মিলার। 

অথচ পাওয়ার প্লে’তে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং ছিল উড়ন্ত। বৃত্তের সুবিধা কাজে লাগিয়ে শুরুর ৬ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৩ রান তুলে নেয় প্রোটিয়ারা। অথচ পরের ১৪ ওভারে তাদের সংগ্রহ কেবল ১০০! শুরুতে ছন্দ না পেলেও পরের দিকে ইংলিশ বোলাররা নিজেদের মেলে ধরেন দারুণভাবে। আলীদ রশিদ ও মঈন আলী ৭ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৪৫ রান দেন। বাকি ১৩ ওভার করেন চার পেসার টপলি, আর্চার, কুরান ও উড। রান দেন যথাক্রমে ২৩, ৪০, ২৯ ও ২২। আর্চার ৩ উইকেট নিয়ে ছিলেন তাদের সেরা। 

তবে ইংলিশদের ম্যাচে ফেরাতে বড় ভূমিকা রেখেছেন অধিনায়ক জস বাটলার। উইকেটের পেছনে দুর্দান্ত ছিলেন বাটলার। প্রথমে ডি ককের ক্যাচ তালুবন্দি করেন চোখের পলকে, বাজপাখির মতো লাফিয়ে। পরে ক্লাসেনকে রান আউট করেন নন স্ট্রাইক প্রান্তে থ্রো করে। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে মিডল অর্ডারে পথ হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর আর তারা বড় রান পায়নি।

ডি কক দুর্দান্ত ইনিংস খেলে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে পেয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। এ জয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার অপরাজিত থাকার রেকর্ড এখনও চলছে। ভারত ও অস্ট্রেলিয়া কেবল এখন পর্যন্ত অপরাজিত রয়েছে। এ জয়ে সেমি ফাইনাল প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল প্রোটিয়াদের। এবার কতদূর তারা যেতে পারে সেটাই দেখার।