ব্রাজিলে পুরুষাঙ্গে ক্যান্সারের হার বাড়ছে। দেশটিতে গত এক দশকে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৬ হাজার ৫০০ জনের বেশি পুরুষের অঙ্গচ্ছেদ করতে হয়েছে এবং মারা গেছে চার হাজারেরও বেশি পুরুষ।
ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ব্রাজিলে ২১ হাজার পুরুষাঙ্গে ক্যান্সারের তথ্য রেকর্ড করা হয়েছে। দেশটিতে প্রতি এক লাখে ২ দশমিক ১ জন পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত। ব্রাজিলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জোয়াও (ছদ্মনাম) ২০১৮ সালে তার পুরুষাঙ্গে একটি আঁচিল দেখতে পান। কেন এই আঁচিল হলো, তা জানতে তিনি বেশ কয়েক জন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছিলেন।
৬৭ বছর বয়সী জোয়াও বলেন, ‘এটি কী, তা জানতে আমি অনেক হাসপাতালে যাওয়া শুরু করি। কিন্তু সব চিকিৎসকই বলেছেন, পুরুষাঙ্গে এটি অতিরিক্ত ত্বক । কেবল এর থেকে নিরাময় করতে ওষুধ লিখে দিতেন চিকিৎসকেরা।’
কিন্তু ওষুধ খাওয়া সত্ত্বেও তার আঁচিল বাড়তে থাকে। এটি তার দাম্পত্য জীবনের ওপরও প্রভাব ফেলতে শুরু করে। জোয়াও ও তার স্ত্রীর যৌন জীবনে সমস্যা দেখা দেয়।
তিনি বলেন, ‘ওই সময় আমরা অনেকটা ভাইবোনের মতো ছিলাম।’ বিষয়টি কী, তা জানতে জোয়াও মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন।
পাঁচ বছর ধরে জোয়াও বারবার বিশেষজ্ঞদের কাছে গিয়েছিলেন। তারা আরও ওষুধ লিখেছিলেন এবং নতুন বায়োপসির নির্দেশ দিয়েছিলেন।
জোয়াও বলেরন, ‘এগুলো কোনো সমাধান করেনি।’
২০২৩ সালে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে জোয়াও-এর পুরুষাঙ্গে ক্যান্সার হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার পরিবারের জন্য খুব অপ্রীতিকর ও বিস্ময়ের চেয়ে আরও বেশি কিছু ছিল। কারণ, আমাকে পুরুষাঙ্গের একটি অংশ কেটে ফেলতে হয়েছিল। আমার মনে হচ্ছে, আমার শিরশ্ছেদ করা হয়েছে। এটি এক ধরণের ক্যান্সার যে ব্যাপারে আপনি মানুষের সাথে কথা বলতে পারবেন না। কারণ এটি রসিকতায় পরিণত হতে পারে।’
পুরুষাঙ্গে ক্যান্সার বিরল রোগ এবং এই রোগে মৃত্যুর হার বিশ্বজুড়ে বাড়ছে।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্রাজিলে প্রতি এক লাখ পুরুষের মধ্যে ২ দশমিক ১ জনের এই রোগ হয়, যা এ–যাবৎকালে সর্বোচ্চ হার। বিশ্বে প্রতি এক লাখ পুরুষের মধ্যে এই রোগে আক্রান্তের হার ৬ দশমিক ১।
পুরুষাঙ্গে ক্যান্সারের লক্ষণ শুরু হয় একটি ঘা দিয়ে, যা কিছুতেই নিরাময় হয় না। ওই ঘা থেকে তীব্র গন্ধযুক্ত স্রাব বের হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে রক্তপাত হয় এবং পুরুষাঙ্গের রং পরিবর্তিত হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার শনাক্ত করা হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্ষত অপসারণ, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার ভালো সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যদি সময়মতো চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে পুরুষাঙ্গ আংশিক বা সম্পূর্ণ এবং অণ্ডকোষ পর্যন্ত কেটে ফেলার প্রয়োজন হতে পারে।