বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে ভারত সফর সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ভারত সফরের বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলনে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ভারত সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে ৫টি নতুন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত ও বিনিময় হয়। এছাড়া ৩টি নবায়িত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত ও বিনিময়ের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ২টি রূপকল্প ঘোষণা স্বাক্ষরিত ও বিনিময় হয়। ভবিষ্যত কাজের ক্ষেত্র হিসেবে ১৩টি যৌথ কার্যক্রমের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সফরের গুরুত্বপূর্ণ দিকের কতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উভয়দেশ শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিতকরণে একটি রূপকল্প ঘোষণা গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি ‘ডিজিটাল অংশীদারিত্ব’ এবং ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সবুজ অংশীদারিত্ব’ বিষয়ক দুটি সমন্বিত রূপকল্পকে সামনে রেখে কাজ করতে আমরা দুপক্ষই সম্মত হয়েছি। রেল যোগাযোগ, সামুদ্রিক সহযোগিতা ও সুনীল অর্থনীতি, তথ্য-প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা, স্যাটেলাইট ও সামরিক শিক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে ৫টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রেল যোগাযোগ সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন শহরসহ নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যাত্রী ও পণ্যবাহী রেলের যোগাযোগ স্থাপিত হবে। স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতে সহযোগিতা, দুর্যোগ মোকাবিলা, সহনশীলতা ও প্রশমন এবং মৎস্যক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য ৩টি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়েছে।’
‘এছাড়া, এই সফরে দু-দেশের মধ্যে গৃহীত কিছু কার্যক্রমের ঘোষণা প্রদান করা হয়। গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নবায়ন ও বাংলাদেশের তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা ও পানি সংরক্ষণের প্রকল্পে ভারতের সহায়তার ব্যাপারে আমরা আলোচনা করেছি। তবে এর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্পত্তি না হওয়া তিস্তার পানি ভাগাভাগির কোন সম্পর্ক নেই।’
বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসার জন্য যাওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে ই-ভিসা চালু এবং রংপুরে ভারতের নতুন সহকারী হাই কমিশন প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে আলোচনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এতে করে মুমূর্ষু রোগীদের ভিসা আগের চেয়ে দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ করা যাবে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে ভ্রমণ করা যাবে। রাজশাহী ও কলকাতার মধ্যে নতুন ট্রেন সার্ভিস; চট্টগ্রাম ও কলকাতার মধ্যে নতুন বাস পরিষেবা চালু এবং গেদে-দর্শনা এবং হলদিবাড়ি- চিলাহাটির মধ্যে দলগাঁও পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রেন পরিষেবা চালু। এতে করে দু-দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বৃদ্ধি পাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনুদান সহায়তার আওতায় সিরাজগঞ্জে ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণ। ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি, যার মাধ্যমে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে। মুক্তিযোদ্ধা প্রকল্পের আওতায় চিকিৎসা প্রত্যাশী রোগীদের জন্য খরচ সর্বোচ্চ সীমা ৮ লাখ টাকা করা এবং বাংলাদেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ চালু। ‘ইউপিআই’ এর ব্যবহার শুরু করার উদ্দেশ্যে দুই দেশ, বাংলাদেশে ‘রুপি’ কার্ড এবং ভারতে ‘টাকা-পে’ কার্ড চালু।
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধানখারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতের রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎকালে, আমরা দু-দেশের বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করি। তারা বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিগত ১৫ বছরে একটি অনন্য উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। যার সুফল দু-দেশের জনগণ ভোগ করছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এ সফরকালে ভারতের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল নব-নির্বাচিত দুটি সরকার কীভাবে সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সে বিষয়ে একটি রূপকল্প প্রণয়ন। যেহেতু নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে ঢাকা ও দিল্লি নতুনভাবে পথ-চলা শুরু করেছে, সে ধারাবাহিকতায় ‘রূপকল্প ২০৪১’ এর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’ নিশ্চিত করার জন্য ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করার ব্যাপারে আমরা আলোচনা করেছি।