সরকারি চাকরিকালে বেসরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে পাসপোর্ট নিয়েছিলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। তার এই জালিয়াতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আট কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের মধ্যে আছেন—অধিদপ্তরের চার পরিচালক, এক উপ-পরিচালক এবং দুই উপ-পরিচালক।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্ব একটি দল তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।
বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশ পরিচয় গোপন করে বেসরকারি পরিচয়ে পাসপোর্ট নিয়েছেন। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তিনি সরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে নীল রঙের অফিসিয়াল পাসপোর্ট করেননি। সুযোগ থাকার পরও নেননি লাল পাসপোর্ট।
জানা গেছে, বেসরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে সাধারণ পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রেও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বেনজীর আহমেদ। বেসরকারি পাসপোর্ট নেওয়ার পর সেটা নবায়নের সময় ধরা পড়লে নবায়ন কার্যক্রম আটকে দেয় পাসপোর্ট অধিদপ্তর। সে সময় তিনি র্যাবের মহাপরিচালক থাকায় চিঠি দেওয়া হয় র্যাব সদর দপ্তরে। তবে, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ম্যানেজ করেন সব। পাসপোর্ট অফিসে না গিয়েই কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মনগড়া তথ্য দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে পাসপোর্ট নবায়ন করে নেন। সম্প্রতি অবৈধ সম্পদ অর্জন ও টাকা পাচারসহ নানা অভিযোগ উঠলে বেনজীর সেই পাসপোর্ট দিয়েই স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে গোপনে দেশ ছাড়েন বলে জানা গেছে।
চাকরিকালে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে রোববার (২৩ জুন) এবং তার স্ত্রী ও কন্যাকে সোমবার (২৪ জুন) দুদকে ডাকা হয়। কিন্তু, তারা দুদকে হাজির হননি, বরং আইনজীবীর মাধ্যমে অভিযোগের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন।
বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-কন্যাকে দুই দফা নোটিস দেওয়ার পরও দুদকে হাজির না হওয়ায় এখন দুদক আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুদকের অনুসন্ধানকারী টিম বেনজীর ও তার পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শেষ করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
এ বিষয়ে সোমবার (২৪ জুন) দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, সাবেক আইজিপি ও তার পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধানকারী টিম এখন দুদক আইন ২০০৪ আইন ও ২০০৭ বিধিমালা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। নির্ধারিত সময়ে টিম এ বিষয়ে কমিশনে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
পরবর্তী আইনি কার্যক্রম কী হবে, জানতে চাইলে দুদকের সচিব জানিয়েছেন, অনুসন্ধানকারী টিমের সুপারিশ অনুযায়ী বলতে গেলে, অন্যদের ক্ষেত্রে আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী যা করা হয়, তা-ই করা হবে।
এর আগে বেনজীর আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ৬ জুন তলব করে দুদক। একই সঙ্গে বেনজীরের স্ত্রী ও সন্তানদের ৯ জুন তলব করা হয়। কিন্তু, তারা নির্ধারিত সময়ে হাজির না হওয়ায় তাদের দ্বিতীয় দফা হাজির হতে নোটিস দেওয়া হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বেনজীর আহমেদ সপরিবারে বিদেশে গেছেন। তারা এখনো দেশে ফেরেননি।