টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে কী ভুল করলো আফগানিস্তান? সেটাই এখন বিরাট প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এক আকাশ স্বপ্ন নিয়ে ত্রিনিদাদে প্রথম সেমি ফাইনালে মাঠে নেমেছিল আফগানিস্তান। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে এটাই তাদের প্রথম সেমি ফাইনাল। টস জিতে ভালো কিছু করার আশা দেখিয়েছিলেন আফগান অধিনায়ক রশিদ খান। কিন্তু চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে লড়াইয়ের শুরুতেই ব্যাকফুটে আফগানিস্তান।
আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৫৬ রান করতেই অল আউট তারা। প্রথমবারের মতো ফাইনালের টিকিট পেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে করতে হবে মাত্র ৫৭ রান। ২৩ রান তুলতে প্রথম ৫ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। পরের ৫ উইকেটে তারা যোগ করে ৩৩ রান।
সতেজ উইকেটে ব্যাটিং নিয়ে বড় কিছুর আশা ছিল আফগানিস্তানের। কিন্তু ব্যাটিংয়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীতাই করতে পারেনি তারা। ব্যাটসম্যানরা এসেছেন আর ফিরেছেন। খেলেছেন আলগা শট। উইকেট উপহার দিয়ে এসেছে প্রতিপক্ষকে।
নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানে অল আউট হয়েছে আফগানিস্তান। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭২ রানে অল আউট হয়েছিল আফগানিস্তান। এতোদিন সেটাই ছিল তাদের টি-টোয়েন্টিতে সর্বনিম্ন দলীয় রান। দশ বছর পর ইতিহাস গড়ার মঞ্চে বিব্রতকর রেকর্ডকে সঙ্গী করলো আফগানিস্তান।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালেও এটি সর্বনিম্ন দলীয় রান। এর আগে কোনো সেমি ফাইনালে একশর নিচে রান হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের দাপটে আফগানিস্তানের ইনিংস থেমে যায় মাত্র ৫৬ রানে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আইসিসির পূর্ণ সদস্য দলগুলোর মধ্যে এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দলীয় রান। ২০২১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৫ রানে অল আউট হয়েছিল।
আফগানিস্তানের নয় ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেনি। সর্বোচ্চ ১০ রান করেছেন আজমতউল্লাহ ওমারজাই। ১২ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১০ রান করেন তিনি। এছাড়া বাকিরা সিঙ্গেল ডিজেটেই আউট।
তাদের দলীয় পুঁজি আরো কম হতো যদি অতিরিক্ত খাত থেকে স্কোরবোর্ডে ১৩ রান যোগ না হতো। ৬ ওয়াইডের সঙ্গে ১ লেগ বাই ও ৬ বাই রান যোগ হয় আফগানিস্তানের স্কোরবোর্ডে।
বল হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা তারবাইজ সামসি। ১.৫ ওভারে ৬ রানে ৩ উইকেট নেন চায়নাম্যান বোলার। এছাড়া ৩ উইকেট পেয়েছেন পেসার মার্কো জানসেন। ১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে শুরুর ধাক্কাটা তিনিই দিয়েছিলেন। এছাড়া কাগিসো রাবাদা ও আনরিক নরকিয়ে পেয়েছেন ২টি করে উইকেট।
পাওয়ার প্লে’তেই ৫ উইকেট নেই আফগানিস্তানের
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লে’তে ৫ উইকেট হারিয়েছে আফগানিস্তান। স্কোরবোর্ডে রান তুলেছে কেবল ২৮। সেমি ফাইনালে লড়াইয়ে শুরুতেই আফগানিস্তান পিছিয়ে গেল বলতে দ্বিধা নেই।
উইকেট খানিকটা ট্রিকি। অসমান বাউন্সের উইকেট। উইকেটে ফাটল আছে। আছে ঘাস। তবে বোলারদের জন্য স্বর্গোদ্যান তেমনটাও নয়। দক্ষিণ আফ্রিকা যতটা না ভালো বোলিং করেছে, আফগানিস্তান ঠিক ততটাই বাজে ব্যাটিং করেছে।
ব্যাটসম্যানরা উইকেট আগলে রাখতে পারেননি নতুন বলে। এই উইকেটে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলা হচ্ছে। সতেজ উইকেটে ব্যাটিং একটু কঠিন হবে তা জানা। কিন্তু যেভাবে ব্যাটিং করার কথা সেভাবে ব্যাটিং হয়নি। হয়নি কোনো প্রতিরোধ। বরং শট খেলতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন ব্যাটসম্যানরা।
প্রথম ওভারের শেষ বলে বাঁহাতি পেসার জানসেন প্রথম স্লিপে তালুবন্দি করান রহমানউল্লাহ গুরবাজকে। ৩ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি গুরবাজ। এক ওভার পর ফিরে গুলবাদিন নাইবকে (৯) ভেতরে ঢোকানো বলে বোল্ড করেন এই বাঁহাতি পেসার।
তৃতীয় ওভারে বল পান কাগিসো রাবাদা। ডানহাতি পেসার প্রথম বলে ইব্রাহিম জাদরানকে এবং চতুর্থ বলে মোহাম্মদ নবীকে বোল্ড করেন। দুজনই শট খেলতে সময় নিয়েছিলেন। আলগা শট খেলে বোল্ড হন তারা। ইব্রাহিম ২ ও নবী শূন্য রানে আউট হন।
জানসেন টানা তৃতীয় ওভার করতে এসে তৃতীয় উইকেটের স্বাদ পান। এবার তার শিকার নাঙ্গেলিয়া খারোতে। শর্ট বল পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান (২)।
২৩ রান তুলতেই স্কোরবোর্ডে নেই ৫ উইকেট। পাওয়ার প্লে’তে রান মাত্র ২৮। আফগানিস্তান কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগে ব্যাটিংয়ে আফগানিস্তান
‘এটা আমাদের জন্য অনেক বড় মঞ্চ।’ - টসের সময় কথাটা বলেছেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক রশিদ খান।
বৃহস্পতিবার ভোরে ত্রিনিদাদে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমি ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয়েছে আফগানিস্তান। টস জিতে আফগানিস্তানের অধিনায়ক রশিদ খান ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক কোনো প্রতিযোগিতায় আফগানিস্তান উঠেছে সেমি ফাইনালে। বাংলাদেশকে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ৮ রানে হারিয়ে রূপকথার গল্প লিখে সেমি ফাইনাল নিশ্চিত করে দেশটি। এর আগে সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়াকেও হারায় তারা। প্রথম রাউন্ডে তারা বধ করেছিল নিউ জিল্যান্ডকে। আফগানিস্তান ক্রিকেটের জন্য এখন পর্যন্ত এটিই তাদের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সাফল্য।
আফগানিস্তান চমকের কারণে অনেকটাই আড়াল হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ধারাবাহিকতা। এবারের বিশ্বকাপে ভারতের মতো এখন পর্যন্ত তারাই অপরাজিত। গ্রুপ পর্ব, সুপার এইট মিলিয়ে সাত ম্যাচে দারুণ ক্রিকেট খেলছে প্রোটিয়ারা। প্রতিটিতে জয়ের সঙ্গে পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ছিল। ছিল কঠিন মুহূর্তে ম্যাচ হাতছাড়া না করার রেকর্ড। স্নায়ু স্থির রেখে নিজেদের উপর বিশ্বাস রেখে পারফরম্যান্সে জোর দিয়ে ম্যাচ বের করে আনার কীর্তি।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে সাতবার সেমি ফাইনালে খেলেও ফাইনালের মঞ্চে ওঠার সুযোগ হয়নি প্রোটিয়াদের। এবার অষ্টমবারের চেষ্টায় মাঠে নেমেছে আইডেন মার্করামরা।
এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে দু’বার মুখোমুখি হয়েছে দল দু’টি। দু’বারই বিশ্বকাপের মঞ্চে। তাতে দুই ম্যাচেই জয় পেয়েছে প্রোটিয়ারা। ২০১০ সালের ৫৯ রানে এবং ২০১৬ সালে ৩৭ রানে জয় পেয়েছিল। আজও দক্ষিণ আফ্রিকাই ফেভারিট। কিন্তু আফগানিস্তান যে ছেড়ে কথা বলবে না তা জানা সবারই।
ক্রিকেট বিশ্ব নতুন এক ফাইনালিস্ট পেতে যাচ্ছে। কে হবে সেই ফাইনালিস্ট? আফগানিস্তান নাকি দক্ষিণ আফ্রিকা! উত্তরটা জানা যাবে এই মহারণ শেষেই।
দুই দল শেষ ম্যাচের একাদশের থেকে কোনো পরিবর্তন আনেনি। অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিতে মাঠে নেমেছে।
আফগানিস্তান একাদশ
রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, গুলবাদিন নাইব, আজমতউল্লাহ উমারজাই, মোহাম্মদ নবী, করিম জানাত, রশিদ খান, রশিদ খান, নাঙ্গেলিয়া খারোতে, নুর আহমেদ, নাভিন উল হক ও ফজল হক ফারুকি।
দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশ
কুইন্টন ডি কক, রেজা হেনড্রিকস, আইডেন মার্করাম, ডেভিড মিলার, হেনরিক ক্লাসেন, ট্রিসটান স্টাবস, মার্কো জানসেন, কেশভ মহারাজ, কাগিসো রাবাদা, আনরিক নরকিয়ে ও তারবাইজ সামসি।