হঠাৎ করে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে সাতক্ষীরার মানুষ। একদিকে তীব্র তাপদাহ আর অন্যদিকে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে নাকাল হয়ে পড়েছে জেলার ২৪ লাখ মানুষ। এ অবস্থায় ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ-এর লাইন থাকলেও সারাদিনে দেখা মেলে না বিদ্যুতের। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। বিদ্যুতের লুকোচুরির কারণে তাদের পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও লোডশেডিংয়ের কারণে জেলার বিসিক শিল্পনগরীতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
সাতক্ষীরা শহরের কলেজ রোড এলাকার ভ্যানচালক সিদ্দিকুর রহমান জানান, গরমে ঠিকমত ভ্যান চালাতে পারছি না। তার উপর বিদ্যুতের এই লোডশেডিং আর সহ্য করা যাচ্ছে না।
শহরের রাজার বাগানের আব্দুল কাদের জানান, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১০টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত আট বার বিদ্যুৎ গেছে। প্রতিবারই ৩০ মিনিট থেকে ৪৫ মিনিট পরে বিদ্যুৎ এসেছে। গরমে সারারাত কেউ ঘুমাতে পারিনি। বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
শহরের পলাশপোল এলাকার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন জানান, তীব্র তাপদাহের মধ্যে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং এ নাকাল হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
কলারোয়া উপজেলার মো. আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে নাকাল হয়ে পড়েছে গ্রামবাসীরাও। সকাল হতে না হতেই সূর্যের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সময় গড়িয়ে দুপুর আসতে না আসতেই সেই তাপদাহ রীতিমত অসহনীয় হয়ে উঠছে। তার উপর ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে সাতক্ষীরা বিসিক শিল্পনগরীতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। সাতক্ষীরা বিসিক শিল্পনগরীর উপ-ব্যবস্থাপক গৌরব দাশ বলেন, বিসিকে উৎপাদনশীল ৪২টি কারখানা রয়েছে। গত তিন দিন ধরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এসব শিল্প কারখানাগুলোতে মারাত্মকভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) মঞ্জরুল আকতার বলেন, জেলায় আমাদের ৬ লাখ ২৪ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১১০ মেগাওয়াট। সেখানে পাচ্ছি মাত্র ৬৮ মেগাওয়াট। ঘাটতি থাকছে ৪২ মেগাওয়াট। ফলে গ্রাহকের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।
সাতক্ষীরা বিদ্যুৎ সরবরাহ (ওজোপাডিকোর) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুনুর রহমান জানান, তার অধীনে সাতক্ষীরাতে ৫৫ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে ১৯ মেগাওয়াট। সেখানে তিনি পাচ্ছেন মাত্র ১৫ মেগাওয়াট। ঘাটটি রয়েছে ৪ মেগাওয়াট।
তিনি আরও জানান, সাতক্ষীরা শহরের ১১টি ফিডার রয়েছে। যা থেকে পর্যায়ক্রমে লোডশেডিং ওঠানামা করা হয়। তবে কবে নাগাত বিদ্যুৎ স্বাভাবিক হবে তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।