খেলাধুলা

অপরাজিত দুই দলের ফাইনালের লড়াই

প্রভাতের সূর্য বলে দেয় পুরো দিনের পূর্বাভাস। পূবের উদয় হওয়া সূর্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে গতকাল ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেয়নি। তাইতো অস্তগামী সূর্যর সাথে গৌধূলীতে এক আকাশ আক্ষেপ ছড়িয়েছে। দিনের ম্যাচেও যা হলো, রাতেও তা রিওয়াইন্ড করেই দেখানো! 

বিশ্বকাপের পরপর দুটি সেমিফাইনাল হলো একপেশে! বৃহস্পতিবার সকালে ত্রিনিদাদে আফগানিস্তানকে স্রেফ উড়িয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। রাতে ইংল্যান্ড পাত্তাই পায়নি ভারতের বিপক্ষে। ফলে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে এখন কেবল টিকে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত। যারা ২৯ জুন (শনিবার) বার্বাডোজে মুখোমুখি হবে নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা নিষ্পত্তির লড়াইয়ে।

ঝাঁজহীন দুটি সেমিফাইনালের পর ফাইনালে উত্তাপ ছড়াবে কিনা সেটা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়ে গেছে। বার্বাডোজের উইকেট রান প্রসবা নয়। ফলে বোলারদের হাতে ম্যাচের নাটাই থাকতে পারে এমনটাই ধারনা করা হচ্ছে। 

তবে ফাইনালে যে দুটি দল খেলতে যাচ্ছে তাদেরকে সব সমীকরণ মাঠের বাইরেই রাখতে হবে। মাঠের ভেতরে তারা অপ্রতিরোধ্য থাকবে এমনটাই প্রত্যাশিত। যেমনটা ছিল পুরো টুর্নামেন্টে। গ্রুপ পর্ব, সুপার এইট, সেমিফাইনাল; তিন স্তরে কোনো ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত হারেনি। 

ভারত একটি ম্যাচে বৃষ্টিতে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে। গ্রুপ পর্ব থেকে ফাইনাল পর্যন্ত ফল হওয়া সাত ম্যাচের সাতটিতেই তারা জিতেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা গ্রুপ পর্ব থেকে শেষ অবধি পর্যন্ত আট ম্যাচেই জিতেছে। ফাইনালের লড়াইটা তাই হতে যাচ্ছে জয়ের গেরো ছুটানোর। কিন্তু এ গেরো ছুটালে আগের সব অর্জনই অথৈ সাগরে হারিয়ে যাবে। কেননা ম্যাচটা যে বিশ্বকাপের শিরোপা নির্ধারণী, বিগ ফাইনাল। 

দুই দল দুই গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার এইটে উঠে। ভারতের গ্রুপটা তুলনামূলক সহজ ছিল। পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও আয়ারল্যান্ড। এর মধ্যে তাদের সামনে কেবল বাঁধা হতে পারতো পাকিস্তান। কিন্তু ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা ভারতের বিপক্ষে পেরে ওঠেনি। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রত্যাশিত জয় পায় ভারত। কানাডার বিপক্ষে রোহিত শর্মাদের ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। 

আইসিসি আগেই জানিয়েছিল, গ্রুপ সিডিংয়ে ভারত ১ নম্বর দল হিসেবে সুপার এইটে যাবে। ম্যাচ হেরে দ্বিতীয় পর্বে উঠলেও তারা ১ নম্বর দলই থাকবে। সুপার এইটে ভারত প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ। ভারতের কেবল ভয় ছিল অস্ট্রেলিয়াকে ঘিরে। কিন্তু তাদেরকেও হারাতে রোহিত, পান্তরা দারুণ ক্রিকেট খেলেছে। আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ পেরে ওঠেনি ভারতের শক্তির সঙ্গে। 

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড তো অসহায় আত্মসমর্পণ করলো। ভারতের ১৭১ রানের জবাবে বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা অলআউট ১০৩ রানে। ৬৮ রানের বিশাল জয়ে ১০ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল ভারত। শেষবার ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ফাইনালে উঠলেও শিরোপা হারায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর ভারত কোনো বৈশ্বিক শিরোপা জেতেনি। এবার কি সেই অপেক্ষা দূর হবে? 

দক্ষিণ আফ্রিকা কি তাদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে? গ্রুপ পর্ব, সুপার এইট ও সেমিফাইনালে দারুণ ক্রিকেট খেলছে প্রোটিয়ারা। সেমি-ফাইনালে আফগানিস্তানকে মাত্র ৫৬ রানে অলআউট করে দক্ষিণ আফ্রিকা বুঝিয়েছে এবার কিছু একটা অর্জন করেই ছাড়বে তারা। দক্ষিণ আফ্রিকা এর আগে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে সাতবার খেলেছে সেমি-ফাইনাল। কিন্তু ফাইনালের টিকিট পায়নি। তাদেরও চ্যালেঞ্জ ছিল সেমি-ফাইনালের গেরো ছুটানোর। ৯ উইকেটের বিশাল জয়ে তারা নিশ্চিত করে প্রথমবারের মতো ফাইনাল। 

গ্রুপ পর্বে প্রোটিয়ারা ক্লোজ কিছু ম্যাচ জিতেছে। যেগুলোতে ঠিকঠাক পারফর্ম করতে পারেননি। কিন্তু ভাগ্যদেবী তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বারবার। যেমন বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪ রান এবং নেপালের বিপক্ষে ১ রানে জয় পায় এইডেন মার্করামের দল। এছাড়া শ্রীলঙ্কাকে ৬ এবং নেদারল্যান্ডসকে ৪ উইকটে হারিয়ে প্রোটিয়ারা উঠে সুপার এইটে। 

গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে তারা চলে যায় গ্রুপ ২ এ। যেখানে প্রতিপক্ষ ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তিন ম্যাচেই তাদের অপ্রতিরোধ্য পারফরম্যান্সে আড়াল হয়েছে প্রতিপক্ষরা। সহ আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র গ্রুপ পর্বে ভালো করলেও সুপার এইটে ছিল নিষ্প্রভ। তাদের জন্য বাঁধা হতে পারতো ইংল্যান্ড। কিন্তু স্নায়ু স্থির রেখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ লড়াইটা জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তারা হারায় আরেক সহ আয়োজক ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও। তাতে সুপার এইটেও তাদের জয়ের ঘোড়া দৌড়াচ্ছিল। 

নিউ জিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশকে হারিয়ে আফগানিস্তান এবারের বিশ্বকাপে চমকে দিয়েছে। রূপকথার গল্প লিখে তারা নিশ্চিত করে সেরা চার। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার তীব্র পেশাদার পারফরম্যান্সে আফগানিস্তান স্রেফ উড়ে যায়। প্রোটিয়াদের গায়ে ‘চোকার্স’ শব্দটি আষ্টেপৃষ্টে লেগে আছে। এবার শেষ লড়াইটাও জিতে অপবাদ দূর করতে চায় তারা।

ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এই ট্রফি আরেকবার ছুঁয়ে দেখতে পারেননি। দক্ষিণ আফ্রিকা শিরোপার কাছাকাছিও যেতে পারেনি। ফাইনালে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিততে কেউ কাউকে ছাড় দেবে না। জয়ের ধারাবাহিকতায় থাকা দুই দলের কে পা পিছলে শিরোপা হারায় সেটাই দেখার।